নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের কার্লি গ্রামে নিজ প্রতিষ্ঠিত ‘বাউল বাড়িতে’ শায়িত উপ মহাদেশের প্রখ্যাত বংশীবাদক বারী সিদ্দিকীর জন্মদিনে কেক কেটে তাকে স্মরণ করলো ভক্তরা।
প্রতি বছরের ন্যায় সোমবার (১৫ নভেম্বর) বিকালে হিমু পাঠক আড্ডার উদ্যোগে বাউল বাড়িতে যান সকল শ্রেণির ভক্তরা। পরে সেখানে বারী সিদ্দিকীর স্বজনদের নিয়ে কেক কাটা ও গানের আয়োজন করে। এতে এলাকার শিশু যুবকরাও অংশ নেয়।
এসময় বারী সিদ্দিকীর সম্বন্ধী (স্ত্রীর বড় ভাই) জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ওমর ফারুককে নিয়ে স্থানীয় শিশুদেরকে সাথে রেখে সংগঠনের সদস্যরা কেক কাটেন। সংগঠনের সভাপতি সাংবাদিক আলপনা বেগমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, শিক্ষক নাইম সুলতানা লিবন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দা নাজনীন সুলতানা সুইটি, সাংবাদিক সালাহউদ্দিন খান রুবেল, শিল্পী প্রিয়াংকা বিশ্বাস, সুব্রত রায় টিটু, শিক্ষার্থী তানভীর হায়াত খান, তানভিয়া আজিম, মীর্জা হৃদয় সাগর, এস ডি অন্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ।
কেক কাটা শেষে প্রিয় শিল্পীর গান নিয়ে আড্ডা বসে। বারী সিদ্দিকীর গাওয়া গান ও লিখা গান পরিবেশন করেন সংগঠনের শিল্পীরা। স্থানীয় শিশুরাও মুগ্ধ হয়ে শোনে গান।
এসময় তারা বারী সিদ্দিকীর নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, বারী সিদ্দিকীর প্রতিভাসহ সকল কিছু নতুন প্রজন্মকে চেনাতে হলে তাকে স্মরণ করতে হবে। বিভিন্ন সাহিত্য সংস্কৃতি সংগঠনের উদ্যোগে এ কাজটি করে যেতে হবে।
তবে বাউলদের নিয়ে স্বপ্নের আয়না “বাউল বাড়ি’র” কার্যক্রম শেষ করে যেতে না পারায় এলাকাবাসী সহ ভক্তদের মনে রয়ে গেছে এক অব্যক্ত কষ্ট। তিনি নিজ অর্থায়নে সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের কার্লি গ্রামে প্রায় চার একর জায়গা খরিদ করেছিলেন।
এতে দেশের বিভিন্ন স্থানের বাউল সাধকদের জন্য একটি বাউল বাড়ি তৈরি করেন। যেখানে বিনামূল্যে বাউল পাঠ হবে বলে তিনি স্বপ্ন দেখতেন। এলাকাবাসী চায় এই স্বপ্ন যেন সত্যি হয়।
বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালো ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলায় সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১৭ সনের ২৪ নভেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান।
বারী সিদ্দিকী শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষ সহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।
ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারি সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন।
ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিক এর উপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।