বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, চালের মূল্য এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ১৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, চালের মূল্য আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে।
এরপর মন্ত্রী বলেছেন, চালের আমদানি শুল্ক মূল্য ছিল ২৮ ভাগ। সেটা দুই ধাপে কমিয়ে ২ ভাগে আনা হয়। এর প্রভাবে চালের দাম স্বাভাবিক হয়েছে।
কিন্তু আমদানি শুল্ক কমানোর আনুপাতিক হারে কি চালের মূল্য কমেছে আসলে? সরকারের উদ্যোগটি ভালো। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় জনগণেরর মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে মোটা চলের দাম ৫২ থেকে ৫৫ টাকা হওয়ায় নিম্নবিত্তের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে। ঠিক এমনি সময় ব্যবসায়ীরা যাতে চাল আমদানি করে জনগণের কাছে সহনীয় মূল্যে বিক্রি করতে পারে সে জন্য শুল্ক কমানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে কিছু মুনাফাখোর চাল ব্যবসায়ীর লাভবান হয়েছেন ঠিকই, সাধারণ মানুষ খুব বেশি লাভবান হতে পারেনি।
তা হলে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে সরকার কি ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেবার জন্য এই শুল্ক কমিয়েছেন? সরকার কি শুধু ব্যবসায়ীদের দিকে তাকালেন? জনগণকে এখনও ৫৯/৬০ টাকায় মিনিকেট খেতে হচ্ছে। তা হলে শুল্ক কমানোয় লাভ কি হলো?
বাজার মনিটরিং বলে একটা শব্দ আছে। কিন্তু সেটা কি আসলে হচ্ছে? পাইকারি বাজারের মতো খুচরা বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি চালের মূল্যের। কারণ একটাই, মনিটরিং।
ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি সরকার, কথাটা কেউ কেউ বলছেন। একের পর এক জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে। যখন যে জিনিসটার দাম বাড়ছে সেটা কমলেও কতটা কমছে? সেটা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন মনে করে না সরকারের নীতি নির্ধারকেরা। যেমন চালের আমদানিতে শুল্ক কমানোর পরে ব্যবসায়ীরা আগের চেয়ে কত কম মূল্যে বিক্রি করছে সেটা তদারকির দরকার ছিল। তা না হলে সুযোগ নেবেই কিছু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা। কারণ তারা সব সময় সুযোগের সন্ধানে থাকে। যখনই সরকারের একটু নমনীয় ভাব বুঝতে পারে, তখনই ব্যবসাটা করে নেয় ব্যবসায়ীরা। মাঝখান থেকে সাধারণ মানুষ হয়ে যায় অসহায়। ভেতরে ভেতরে সরকারের প্রতি তাদের জন্ম নেয় ক্ষোভ।
চালের আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে বাজার মনিটরিং করার ব্যাপারে উদ্যোগী হবার বিশেষ দাবি থাকল। তা না হলে চাল আমদানিতে সরকারের শুল্ক কমানোর সুবিধা সাধারণ মানুষের কোনো কাজেই আসবে না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)