‘চালের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় গরীব মানুষের অসুবিধা হচ্ছে’- এমন মন্তব্য করেছেন আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি গত ২৪ ডিসেম্বর সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন।
কই চালের মূল্য নিয়ে তো কোনো আন্দোলন হচ্ছে না। কোনো সংগঠন বা রাজনৈতিক দল গরিব মানুষের অসুবিধা হচ্ছে চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে, সে জন্য প্রেসক্লাবে আন্দোলন করল না। সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করল না।
সেদিক থেকে অর্থমন্ত্রীর এই উপলব্ধি আমাদের আশা জাগায়। পাশাপাশি আমাদের মনে প্রশ্নও জাগায়। প্রশ্ন হল- কেন তা হলে সরকার চালকল মালিকদের কারসাজি বা মিথ্যে বাহানার ব্যাপারে সচেতন হচ্ছে না?
আমরা আসলে সবাই মুখে মুখে অনেক দরদ দেখাই। অনেক কথা বলি।
এই যে দরদ, এর পেছনে রাজনীতিটাই মুখ্য। ভোট, নির্বাচন আর ক্ষমতায় যাওয়ার আর ক্ষমতায় থাকার প্রচণ্ড লোভই আমাদের মিথ্যে কথা বলতে উৎসাহ যোগায়।
আমরা দেশের প্রতিটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কিছু খেলা দেখি। খেলা বললে অনেকে কষ্ট পেতে পারেন। কিন্তু বিনয়ের সাথে বলতে চাই, এমন কিছু সংস্থা বা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা নির্বাচনের ঠিক আগমুহুর্তে তাদের মোটা দাগের দাবি নিয়ে আন্দোলন বা অনশন শুরু করে। সেই দাবি না মানলে তারা আমরণ অনশনে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। এই শ্রেণীর পেশাজীবীরা মনে করেন নির্বাচনের আগে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য দাবি-দাওয়া নিয়ে অনশন শুরু করলে ভোটের জন্য সরকার অনেক দাবি মেনে নেবেন। বিরোধী দলও এই সময়টায় তাদের পাশে থাকবে।
প্রত্যেক সরকারের শেষ সময়ে এসে পেশাজীবীরা দাবি দেওয়ার ব্যাপারে সোচ্চার হন। এটা কি শুধুই ভোটের হিসেব? সরকারও ক্ষমতায় থাকার জন্য কিছু দাবি মেনে নেন।
এখন প্রশ্ন হল কেন চালের দাম নিয়ে সরকার কোনো অ্যাকশনে যাচ্ছে না। তারা কি মনে করেন চালের মূল্য কমানোর জন্য যতক্ষণ না আন্দোলন হবে বা আমরণ অনশন হবে ততক্ষণ পর্যন্ত চাল কল মালিক সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।
এই যদি হয়ে থাকে সরকারের চিন্তা ভাবনা, তা হলে সাধারণ মানুষ আরও দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাবে। আর তার প্রতিশোধ হিসেবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের বাক্সে ব্যালট ফেলার আগে সিল মারার সময় একটু চিন্তাভাবনা করবেন।
সবচেয়ে সেরা জোকস মনে হয় তখনই, যখন চালের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকার বারবার সুনামগঞ্জের হাওরে অকাল বন্যার কথা বলেন। এই কথা বলে পরোক্ষভাবে বুর্জোয়া শ্রেণীকে উৎসাহ যোগাচ্ছেন। যারা চালের মজুত করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের ভেতরেই একশ্রেনীর নেতারা এই মজুতদারদের কাছে সুবিধা নিয়ে থাকেন বলেই চালের দাম কমছে না। আর তাদের ব্যাপারে মিডিয়ার সামনে হম্বিতম্বি করলেও ওটা নিতান্তই অভিনয় ছাড়া আর কিছু না।
আমরা সাধারণ মানুষ শুধু দেখছি পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, কমছে না। চালের দাম বাড়ছে, কমছে না।
এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কি কোনো রাস্তা নেই?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)