চালের মূল্য নিয়ে কিছুদিন আগে যে ধরনের তৎপরতা দেখা গেছে, তাতে মনে হয়েছিল দেশে এবার একটা বিপ্লব ঘটবে। সরকারের মন্ত্রীরা যেভাবে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন, পত্রপত্রিকা আর টেলিভিশনে তাদের সেই প্রতিবাদী আর জনদরদী চেহারা দেখে সাধারণ মানুষ আশান্বিত হয়েছিলেন। এবার মুনাফাখোর মজুতদারদের একটা কিছু করেই ছাড়বেন তারা। কিন্তু নিম্নবিত্তের সেই আশার পায়রা আর আকাশে ওড়েনি।
খুবই অবাক হওয়ার বিষয়, দেশে চিনির মূল্য ছিল একসময় ৪০-৪২ টাকা। হুট করে তা৭০ টাকা হয়ে গেল। দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনা চললো কিছুদিন। কিন্তু আর কমলো না। গরুর মাংস ২৮০ টাকা ছিল অনেক দিন। হুট করে ৪০০ টাকা তারপরে ৫০০ টাকা। আর কি কমলো? কমলো না। কত মিটিং, কত সিটিং হলো। এই করলে সেই হবে, সেই করলে এই হবে, কিন্তু তা ওই পর্যন্তই। আমরাও মেনে নিয়েছি। এভাবে মেনে নেবার প্রবণতা আমাদের কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে?
আমরা চাল নিয়ে কি দেখলাম? বাণিজ্যমন্ত্রী একদিন সচিবালয়ে চালের মূল্য বৃদ্ধির জন্য চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ আর সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলীকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিলেন। কারণ তারা অহেতুক চালের মূল্য বৃদ্ধি করে দেশের ভেতর অরাজকতার সৃষ্টি করছে। আরও গুজব শোনা গেল তারা বিএনপি করে তাই চালের মূল্য বাড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার পাঁয়তারা করছেন। পরদিনই একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকের শিরোনাম দেখে চোখ আটকে গেছে অনেকের। শিরোনাম ছিল এরকম- রশিদের ঢাল হানিফ।
উক্ত সংবাদে লেখা হয়, ‘কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আব্দুর রশিদ এখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের লোক। দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের হাত ধরে তিনি ও তার ভাই বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এখন হানিফের পেছনে পেছনেই হাঁটছেন তিনি।
সংবাদে আরও জানা গিয়েছিল, দলীয় কোন পদে না থাকলেও আব্দুর রশিদ এতদিন বিএনপি সমর্থক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তার ভাই সিদ্দিকুর রহমান কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন, এখন সদর উপজেলার আইলচারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আর সে কারণে চালের বাজারের অন্যতম এই নিয়ন্ত্রকের হঠাৎ আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নিয়ে কুষ্টিয়ার নেতা-কর্মীদের মনে সন্দেহ। সেই সঙ্গে চালের দামের লাগাতার বৃদ্ধি সে সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে আব্দুর রশিদ বলেছিলেন, ‘হানিফ সাহেবের হৃদ্যতা আকর্ষণীয়। যে সাধারণ মানুষের পেছনে থাকবে, আমরা তার পেছনে আছি। তবে আমি ব্যবসা করি, রাজনীতি নয়। বিএনপিরও কোনো পদে আমি ছিলাম না। আওয়ামী লীগেও না।’
এখন চালের সাথে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। গরীর মানুষের অবস্থা যাচ্ছেতাই। যাদের আয় রোজগার ভালো, তাদের দিন চলে যাচ্ছে। কিন্তু যাদের সীমিত এবং হিসেব করে চলার মত আয়, তাদের?
সরকার এখন নানাভাবে চাপের ভেতর আছে। রোহিঙ্গাদের নিয়েও পেরেশানিতে আছে। তার ওপর দ্রব্যমূল্যের এই অবস্থা সরকারের ভাবমূর্তিকে কোথায় নিয়ে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চালের মূল্যের ব্যাপারে নিয়মিত মনিটরিং না করা গেলে দেশ ক্রমশই অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়বে। আর তখনই বিরোধী দল সুযোগ নেবে, এই সরকার দশ টাকা কেজি চাল খাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় চাল খাওয়াচ্ছে। দেশের অকাল বন্যা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি তারা না বলেই ঢালাওভাবে চালের আকাল বলে গুজব ছড়াবে। সেই সুযোগটি যেন না নিতে পারে সে জন্য এখনই বাণিজ্যমন্ত্রী আর খাদ্যমন্ত্রীকে কঠোর হতে হবে। যাতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট না করতে পারে কেউ।
চালকল মালিক সমিতির নেতাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। চালের দাম বাড়িয়ে দিয়ে সরকারকে কুপোকাত করা সোজা। কারণ বাঙালি আর কিছু না পেলেও দুবেলা পাতে ভাত পেলেই খুশি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)