সরকারের সহযোগী হিসেবে চার বছরে ৩ লাখ ১৪ হাজার পরিবারের অতি দারিদ্র্যতা দূর করেছে বলে জানিয়েছে ব্র্যাক।
বুধবার ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে ব্র্যাকের অবদান বিষয়ক প্রতিবেদন ২০২০’ এর ভার্চুয়াল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (গ্রেড -১) মো. রাশেদুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।
ব্র্যাক বলছে, সরকারকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে সহায়তা করার লক্ষ্যে ২০১৬-২০২০ সালের মধ্যে ৪ লাখ পরিবারকে অতি দারিদ্র্য থেকে দূরে রাখার লক্ষ্য নিয়েছিল, যা একই সময়ের জন্য জাতীয় লক্ষ্যমাত্রার ২১.৪%। এ লক্ষ্যে ২০১৬-২০১৯ সময়ে ৩ লাখ ১৪ হাজার ২১৭টি পরিবার অতি দারিদ্র্য জয় করেছে।
অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়, ২০১৬ সালে গৃহীত পাঁচ-বছরের কৌশলগত পরিকল্পনায় ব্র্যাক আটটি কর্মসূচির মাধ্যমে এসডিজি অর্জনে তার করণীয় নির্ধারণ করেছে। এগুলো হচ্ছে: চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ; আর্থিক ক্ষমতায়ন; শোভন কাজের জন্য নিয়োগযোগ্য দক্ষতা; জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা; লিঙ্গ সমতা; শিক্ষার মান উন্নয়ন; সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও উন্নত পুষ্টি; এবং দরিদ্রবান্ধব নগর উন্নয়ন।
২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ব্র্যাক বাংলাদেশের সবচেয়ে নিম্নবিত্ত ও বঞ্চিত নারী-পুরুষের মধ্যে ২ কোটি মানুষের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজ বলেন, বিশ্বের প্রথম এনজিও হিসাবে কাঠামোগত উপায়ে এসডিজির অবদান পরিমাপ করার জন্য ব্র্যাককে অভিনন্দন জানাই। আমি বিশ্বাস করি যে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর তত্ত্বাবধানে, যদি সকল এনজিও তাদের সাংগঠনিক অবদান পরিমাপ করে, তবে তাদের সমষ্টিগত অবদান সহজেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর (গ্রেড-১) মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, এনজিওগুলো সরকারের সহায়ক শক্তি, তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আজ আবারও স্থাপন করলো ব্র্যাক। আমি দেখতে চাই অন্য সকল নিবন্ধিত এনজিও একই ধরনের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিবেদন নিয়ে এগিয়ে আসুক।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ সব সময়ই বলতেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত ও চাহিদা অনুসারে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সেবা পৌঁছে দিতে হবে। সে অনুযায়ীই আমরা কর্মকৌশল ঠিক করি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ব্র্যাক ছাড়া অনেক এনজিও বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর। এই সেক্টর দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জায়গা। বিদেশি সাহায্য কমে যাওয়ায় এরা হুমকির মুখে পড়েছে বলে তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়নকাজও ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে আমরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
প্রতিবেদনটি ২০১৬-২০১৯ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা। এরপর কোভিড ১৯ মহামারি শুরু হলে এসংক্রান্ত জরুরি সাড়া প্রদান কর্মসূচিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হয়। ফলে কোভিড ১৯ মহামারির প্রভাব বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ ঘটেনি।
প্রতিবেদনে ব্যবহৃত সূচকের কাঠামো এবং ম্যাপিং অন্যান্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওকে স্থানীয় পর্যালোচনার অনুরূপ উদ্যোগ নিতে সহায়তা করবে। এই প্রতিবেদনের ক্ষেত্রটি পাইলট প্রকল্প হিসাবে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রথম পাঁচটি এসডিজিকে রাখা হয়েছে। আগামী বছরগুলিতে বাকি এসডিজি অর্জনে ব্র্যাকের অবদান উপস্থাপনের জন্য একই ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করা হবে বলে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়।