চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যয় কমাতে কঠোর হয়েছে প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি। সংগঠনটির সঙ্গে পরিচালক সমিতি ও এফডিসির অন্যান্য সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে। চলচ্চিত্রের ‘মাদার অর্গানাইজেশন’ প্রযোজক সমিতি মনে করে, চলচ্চিত্রে যেসব প্রতিবন্ধতা ও অনিময় রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে নির্মূল করার জন্য নতুন নীতিমালার বিকল্প নেই। তাই প্রণয়ন হয়েছে নতুন নীতিমালা।
নতুন নীতিমালা প্রণয়ন প্রসঙ্গে সোমবার দুপুরে এফডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি। সেখানে প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, সাধারণ সম্পাদক শাসমুল আলম, ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি পদে কামাল মো. কিবরিয়া লিপু, সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে আলিমুল্লাহ খোকন, কোষাধ্যক্ষ পদে মেহেদী হাসান সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ইলা জাহান উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, উপ-মহাসচিব শাহীন সুমন, সাংগঠনিক সচিব কবিরুল ইসলাম রানা (অপূর্ব রানা) প্রমুখ। নতুন নীতিমালা পাঠ করে শোনান প্রযোজক কিবরিয়া লিপু।
একনজরে দেখে নিন চলচ্চিত্রের নির্মাণে নতুন নীতিমালায় যা যা থাকছে:
শুটিং টাইম: প্রতিদিন সকাল ১০ টায় অবশ্যই ক্যামেরা ওপেন (শুটিং শুরু) করতে হবে, চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। এরমধ্যে যোহরের নামাজ ও দুপুরের খাবারের জন্য একঘণ্টা বিরতি থাকবে।
কোনো শিল্পী কিংবা কুশলী যদি সময় মতো শুটিং সেটে না আসেন, তার জন্য যদি শুটিং শুরু না হয় এবং আর্থিক ক্ষতি হয় সেই দায়-দায়িত্ব দেরিতে আসা শিল্পী বা কুশলীকে বহন করতে হবে। শিল্পী আসার পরেও সময়মতো শুটিং শুরু করতে না পারলে তার দায় নিতে হবে পরিচালককে।
সকাল ১০ টায় ক্যামেরা ওপেনের পর কোন শিল্পী কখন আসবে সে সময় নির্ধারণ করবেন পরিচালক।
শুটিং কল টাইম: শুটিংয়ে কল টাইম থাকবে সকাল ৮টায়। তবে শিল্পীদের প্রয়োজনে কল টাইম নির্ধারণ করে দিবেন পরিচালক।
চুক্তিস্বাক্ষর: শিল্পী ও কুশলীদের অবশ্যই প্রযোজকের সঙ্গে চুক্তিস্বাক্ষর করতে হবে। চুক্তির সময় প্রথম কিস্তি ২৫ শতাংশ, পরবর্তী কাজের অগ্রগতির ভিত্তিতে বাকি ৭৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হবে। মোট তিন কিস্তিতে পারিশ্রমিক পরিশোধ করা যাবে। কোনোভাবেই এককালীন পারিশ্রমিক প্রদান গ্রহণযোগ্য হবে না।
কনভেন্স: এক লাখ টাকার উপরে যাদের পারিশ্রমিক তারা কোনো প্রকার কনভেন্স (যাতায়াত ভাতা) পাবেন না।
আউটডোরে শুটিং: যেসব কলাকুশলী দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করে পারিশ্রমিক পান, তারা আউটডোরেও সেই পরিমাণ পারিশ্রমিক পাবেন। আউটডোরে শুটিং চলাকালীন সহকারী পরিচালক ও সহকারী চিত্রগ্রাহকরা কনভেন্সের অর্ধেক হাত খরচ পাবেন।
কস্টিউম/ড্রেস (পোশাক): ড্রেসের জন্য কোনো শিল্পীকে আলাদা কোনো টাকা প্রদান করা হবে না। গল্পের প্রয়োজনে শিল্পীদের ড্রেস প্রোডাকশন থেকে তৈরি হবে, শুটিং শেষে সকল ড্রেস শিল্পীকে প্রোডাকশনের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। কোনো ড্রেস কোনো শিল্পীর পছন্দ হলে সেটা ক্রয়মূল্য দিয়ে শিল্পী শুটিং শেষে নিতে পারবেন।
চলচ্চিত্রের প্রমোশন: চলচ্চিত্র মুক্তির আগে প্রমোশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ (প্রধান) শিল্পীদের কমপক্ষে ৫ দিন শিডিউল দিতে হবে।
শিল্পীদের সহকারী: নায়ক, নায়িকা, ভিলেন (প্রধান চরিত্র) যারা কাজ করেন তারা একজন করে সহকারী সঙ্গে নিতে পারবেন। যেটির ব্যয় প্রোডাকশন বহন করবে। অতিরিক্ত কেউ থাকলে তাদের ব্যয়ভার প্রোডাকশন বহন করবে না।
চলচ্চিত্র নির্মাণে এই নীতিমালা আগামি ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাসমুল আলম। তিনি আরও বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাণের এই নতুন নীতিমালা যদি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় তবে প্রতিটি চলচ্চিত্র থেকে কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় কমে যাবে।
চলচ্চিত্র নির্মাণের এই নতুন নীতিমালা পর্যবেক্ষণ করার জন্য গঠন করা হয়েছে ১১ সদস্যের মনিটরিং কমিটি। আহ্বায়ক হিসেবে থাকছেন শামসুল আলম, এবং সদস্য সচিব বদিউল আলম খোকন। অন্যান্য সদস্যরা হলেন জায়েদ খান, আবদুল লতিফ বাচ্চু, আবু মুসা দেবু, সোহানুর রহমান সোহান, এমডি ইকবাল, আলিম উল্লাহ্, আসাদুজ্জামান মজনু, কবিরুল ইসলাম রানা, সুব্রুত।
চ্যানেল আই অনলাইনকে প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, চলচ্চিত্রের এই নীতিমালার পর শিগগির আমরা প্রদর্শক সমিতি (সিনেমা হল মালিক)-এর সঙ্গে নীতিমালা আলাপ করে আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করবো। এতে করে সিনেমা হলের দুর্নীতি, মেশিন ভাড়া সবকিছুই দূর হবে। চলচ্চিত্রের খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠার জন্য এই নীতিমালার বিকল্প নেই।
পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, বর্তমান সময় এই নীতিমালা মেনে কাজ করা প্রয়োজন। প্রথমবারের মতো এফডিসির সংগঠনগুলো সমন্বয়ে এই নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। কিছু অসাধু মানুষের জন্য এবং প্রযোজক সমিতির নির্বাচন সাত বছর থেমে থাকায় এমন নীতিমালা প্রণয়ন সম্ভব হয়নি। আশা করছি এর মাধ্যমে সবকিছু শৃঙ্ক্ষলা ফিরবে।
চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি এবং পরিচালক সমিতির নির্বাচিত কমিটির সদস্যরা চলচ্চিত্রের সমস্যা নিয়ে ২৪ আগস্ট এক যৌথ সভায় বসেন। সেখানেই নতুন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই মাসের ২৮ তারিখ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে এবং সমাধানের জন্য নীতিমালা তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত সকল সংঠগনের নেতারা গত ৬ অক্টোবর প্রযোজক সমিতির অফিসে বসে চূড়ান্ত সভা করেন।