চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

চবি’র ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে ‘বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট লঙ্ঘন’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এর ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট-১৯৭৩ লঙ্ঘন করে সমাজতত্ত্ব বিভাগের এক অধ্যাপককে বিভাগীয় সভাপতি পদে বহাল রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, মৌমিতা পাল এবং প্রভাষক মাজহারুল ইসলামের দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়: ‘‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার সময়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ১ম বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেসময় মো. সাখাওয়াত হোসেন, মৌমিতা পাল, মো. মাজহারুল ইসলাম সহ প্রভাষক স্থায়ী পদে উক্ত বিভাগে যোগদান করেন।

এরপর অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী অবসরে গেলে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবতীকালে গত ২ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ.বি.এম. নাজমুল ইসলাম খানকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

গত ৩০ মে চলতি বছরে আমাদের মধ্যে দুইজন প্রভাষক হতে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিভাগে যোগদান করেন। বিগত ২৪ নভেম্বর বিভাগের সভাপতিকে মাধ্যম করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর সংবিধির ধারা ৭ অনুযায়ী ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে বিভাগীয় শিক্ষকদের মধ্য থেকে সভাপতির দায়িত্ব প্রদানের ব্যবস্থা করার নিমিত্তে একটি পত্র প্রদান করা হয়।

কিন্তু  বিভাগীয় সভাপতি পত্র গ্রহণের সাত কর্মদিবস অতিক্রান্ত হলেও রেজিস্ট্রার বরাবর উক্ত পত্রটি পাঠাননি। অন্যদিকে, রেজিস্ট্রার দপ্তরে উক্ত পত্রের অগ্রীম কপি জমা দিতে গেলে, রেজিস্ট্রার দপ্তর পত্রটি গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতেকালে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের আবেদন অগ্রাহ্য করে ড. এ.বি.এম. নাজমুল ইসলাম খানকেই বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে পরামর্শ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের এহেন পরামর্শে আমরা বিস্মিত। কারণ বিভাগীয় দুইজন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ড. এ.বি.এম. নাজমুল ইসলাম খানকেই বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে বহাল রাখা চ.বি. এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর সংবিধির ধারা ৭ সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’’

বিবৃতিতে ওই তিন শিক্ষক আরও অভিযোগ করেন, ‘‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর লঙ্ঘন এখানেই থেমে নেই। গত ৫ ডিসেম্বর বিভাগীয় সভাপতি নৈমিত্তিক ছুটিতে যাওয়ার সময় রেজিস্ট্রার বরাবর একটি পত্রে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন মহোদয়কে বিভাগীয় সভাপতির ‘রুটিন দায়িত্ব’ প্রদানের অনুরোধ করেন; যা নজিরবিহীন এবং চ.বি. এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর গুরুতর লঙ্ঘন।

কেননা, ২ সেপ্টেম্বর  ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৪১তম সভার সিদ্ধান্ত এবং ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ সালে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৩৩৫তম সভার সিদ্ধান্ত ৭ অনুযায়ী ভিন্ন বিধান রয়েছে। বিভাগের সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের এহেন স্বেচ্ছাচারী আচরণে আমরা বিস্মিত, মর্মাহত এবং অপমানিত।’’

এছাড়াও বিবৃতিতে তারা বলেন: ‘‘ড. এ.বি.এম. নাজমুল ইসলাম খান এর স্বেছাচারিতার সর্বোচ্চ বহি:প্রকাশ ঘটেছে গত ০৮ নভেম্বর ২০২১ সালে  অনুষ্ঠিত বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির ৬ষ্ঠ সভায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৬তম সিন্ডিকেট সভার ‘বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি’ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার ন্যূনতম তিন কর্ম দিবস পূর্বে সভার আলোচ্য সূচী প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের লিখিতভাবে অবহিত করতে।

ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের ৬ষ্ঠ প্ল্যানিং কমিটির সভা আহ্বানের ক্ষেত্রে উক্ত নিয়ম সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। উক্ত প্ল্যানিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর আলোচ্যসূচিও প্রকাশ করা হয় ০৮/১১/২০২১ তারিখে (সংযুক্তি- ০৯)।

উক্ত সভায় বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও সভাপতি প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা না করেই সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে, মানসিক চাপ প্রয়োগ করে তার পূর্বলিখিত সিদ্ধান্তে সদস্যদের স্বাক্ষরদানে বাধ্য করেন। যেখানে একজন অধ্যাপক (সমাজবিজ্ঞান বা ক্রিমিনোলজি), চারজন সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক [(নৃবিজ্ঞান/সমাজবিজ্ঞান-২ জন, আইন-১ জন এবং ক্রিমিনোলজি-১ জন)] নিয়োগ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিভাগের কারিকুলাম পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, নৃবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের মাত্র একটি করে কোর্স রয়েছে। শুধুমাত্র একটি করে কোর্স এর পাঠদানের জন্য উক্ত বিষয়সমূহের অনার্স, মাস্টার্সধারী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি কোনভাবেই বোধগম্য নয়। কারণ, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উপরোক্ত বিষয়সমূহের (নৃবিজ্ঞান/সমাজতত্ত্ব) পাঠদান অতিথি শিক্ষকের মাধ্যমে চলমান রয়েছে এবং এ ধারাটি অন্যান্য বিভাগেও অনুশীলন করা হয়ে থাকে। এতে করে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা একাডেমিকভাবে উপকৃত হবে এবং উপরন্তু আর্থিক সাশ্রয় হবে। তৎপ্রেক্ষিতে সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে উক্ত প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য সভার অব্যবহিত পরেই সভাপতিকে মৌখিক অনুরোধ করা হয়।

তিনি কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরবর্তীকালে ২৫ নভেম্বর বিভাগীয় সভাপতি বরাবর উক্ত প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্ল্যানিং কমিটির নতুন সভায় তদ্বিষয়ে (শিক্ষক নিয়োগ) সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য লিখিতভাবে জানানো হয়।

ইতোমধ্যে বিভাগীয় সভাপতি আজ ৮ ডিসেম্বর প্ল্যানিং কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তিনি আমাদের লিখিত আবেদনটি পরবর্তী প্ল্যানিং কমিটির এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করেননি (সংযুক্তি- ১১)। ইহা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ এ্যাক্ট আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’’

এমতাবস্থায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর পবিত্রতা এবং মর্যাদা সমুন্নত রাখতে উল্লিখিত বিষয়ে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের তিন শিক্ষক উর্ধ্বতন কর্র্তপক্ষের নিকট আহ্বান জানান।