প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি ডিজিটাল বাংলাদেশের সম্ভাবনার পথে অন্তরায় বলে জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় এমন সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার অনুরোধ করেছেন তারা। বাড়তি খরচ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে অপারেটরগুলো।
অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে করোনাভাইরাসের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে টিকে থাকা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা সামনে রেখে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য এ বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
সেসময় তিনি মোবাইল ফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন।
৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে মোবাইল ফোনের সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ১ শতাংশ সারচার্জ, ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং অন্যান্য খরচ মিলে ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এবার খরচ হবে ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
আগের অর্থবছরেও ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল সম্পূরক শুল্ক।
এর মানে হলো, প্রতি ১০০ টাকা রিচার্জে সরকারের কাছে কর হিসেবে যাবে ২৫ টাকার কিছু বেশি, এত দিন যা ২২ টাকার মতো ছিল।
বিটিআরসির সর্বশেষ মার্চ মাসের হিসাবে, বর্তমানে দেশে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা ১৬ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার। আর ইন্টারনেট গ্রাহক ১০ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার।
অপারেটরগুলো পৃথক বিবৃতিতেও অনুরোধ করেছে বাড়তি খরচ কমানোর জন্য।
গ্রামীণফোনের হেড অব পাবলিক অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সম্পূরক শুল্ক বর্ধিত করায় কোভিড-১৯ ও পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় মোবাইল সেবা ব্যবহারে গ্রাহকদের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ডিজিটাল বাংলাদেশের সম্ভাবনার পথে অন্তরায়। গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা এই সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার অনুরোধ করছি।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর আরোপিত ২ শতাংশ ন্যূনতম আয় কর প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাহার না হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশেষ করে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে ডিজিটাল সেবা প্রদান এবং ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরিতে অপারেটরদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পরেও ২ শতাংশ ন্যূনতম করের বোঝা প্রত্যাহার না হওয়াটা আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। আমরা মনে করি, বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সুযোগ এখনো আছে এবং এ বিষয় একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সরকার নেবে।
তিনি বলেন, সব ধরনের মোবাইল সেবা ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক।
‘এনবিআরের জারি করা এসআরও অনুযায়ী, আজ মধ্যরাত ১২টা থেকে সব ধরনের মোবাইল সেবার ওপর নতুন এসডি হার কার্যকর করা হবে, এ বিষয়ে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।’
সাহেদ বলেন, উচ্চ করভারে জর্জরিত মোবাইল সেবার ওপর তাই নতুন করে ৫ শতাংশ এসডি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের দুর্দশা আরও বাড়াবে। করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশ এখন ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন, এসডি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এ ধারাতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলা টেলিযোগাযোগ খাতের সমস্যাগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত থেকে গেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এরিক অস বলেন, আমাদের গ্রাহকরা ইতোমধ্যেই উচ্চ করের বোঝা বহন করে টেলিকম সেবা গ্রহণ করছেন। এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হলে তা অপেক্ষাকৃত স্বল্প আয়ের গ্রাহকদের প্রভাবিত করবে। এর ফলে বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে পড়বে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর করোনা মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে সরকারের কাছে আমরা ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছি।
‘এছাড়া যেহেতু আমরা ব্যবসায়িকভাবে এখনো লাভজনক অবস্থানে যেতে পারিনি, সেহেতু আমরা সরকারকে অনুরোধ করবো, আমাদের আয়ের ওপর ন্যূনতম করের হার যেনো পুনর্বিবেচনা করা হয়।’
এছাড়াও এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) জানিয়েছে দেশের অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিকম খাতের অবদান যত উল্লেখযোগ্যই হোক না কেন, সরকার নিয়মিতভাবে প্রতিবছর এই খাতের উপর আরও বেশি করে করের বোঝা চাপিয়ে একে আরও দুর্বল করে তুলছে।