করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যখন স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব, বিশ্বক্রীড়াঙ্গন। দিন আনে দিন খায় মানুষের উপর পড়েছে অভিঘাত, ক্রীড়া সংগঠন-ক্লাবগুলোও পড়েছে বড় ক্ষতির মুখে। খেলা কবে মাঠে গড়াবে ফের সেটির দিশা নেই। পরিস্থিতিতে নানা অঙ্গনের খেলোয়াড়রা বেতন কম নিতে সম্মত হচ্ছেন। বেতন কাটে পড়াদের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। অনেকে আবার এগিয়ে আসছেন অনুদান নিয়ে, করছেন তহবিল গঠন।
দাতব্য প্রতিষ্ঠান বা সরকারি-বেসরকারি তহবিলের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়রা। সঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন সামর্থ্যবানদের। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকারা যেমন করোনা মোকাবেলায় তহবিল গঠন করেছেন।
বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ১৭ ক্রিকেটার মাসিক বেতনের ৫০ শতাংশ দিয়েছেন। তামিম-মুশফিকরা মার্চ মাসের বেতনের অর্ধেকটা দিয়েছেন তহবিলে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা অন্য ক্রিকেটাররাও আয়ের ৫০ শতাংশ দিয়েছেন। তাতে ৩০ লাখ ১৫ হাজার টাকা উঠেছে এপর্যন্ত।
ওদিকে জুভেন্টাসের কোচ, খেলোয়াড়রা চার মাসের বেতন নেবেন না বলে একমত হয়েছেন। ইতালিয়ান লিগ সিরি আর ক্লাবটিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, পাওলো দিবালার মতো তারকা ফুটবলাররা খেলেন। করোনাভাইরাসের মহামারীতে খেলা বন্ধ থাকার সময়টাতে তাদের এই বেতন না নেয়া ক্লাবটিকে ৯৯ মিলিয়ন ইউরো বাঁচাতে সাহায্য করবে। মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন মাসে কোনো বেতন নেবেন না বলে ক্লাবকে জানিয়ে দিয়েছেন রোনালদো-দিবালারা।
বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের খেলোয়াড়রাও কর্তিত বেতনের জন্য সম্মতি দিয়েছেন। আংশিক বেতন না নেয়ার মধ্যে বার্সেলোনার লিওনেল মেসি, অ্যান্টনিও গ্রিজম্যানরা আছেন। দুঃসময়ে ক্লাবের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। মহামারী চলাকালীন সময়ে নিজেদের বেতনের ৭০ শতাংশ কম নেবেন মেসি-সুয়ারেজ-পিকেরা।
অধিনায়ক মেসি নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। বেতন কাটছাঁটে বার্সা খেলোয়াড়দের আপত্তি আছে বলে যে খবর গণমাধ্যমে এসেছিল, সেটিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। মেসি বলেছেন, সঙ্কটকালীন সময়ে ক্লাবের বাকি কর্মচারীরা যাতে শতভাগ বেতন পান সেটি নিশ্চত করতে সব সহযোগিতাই করতে প্রস্তুত তিনি ও সতীর্থরা।
মেসি ব্যক্তিগতভাবেও করোনাভাইরাসের বিপক্ষে লড়াইয়ে আছেন। তিনি, পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ম্যানসিটি কোচ পেপ গার্দিওলা বড় রকমের অনুদান দিয়েছেন। বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার দুটি হাসপাতালে যৌথভাবে ১০ লাখ ইউরো দিয়েছেন মেসি। গার্দিওলা সাবেক শিষ্যের সমপরিমাণ অর্থ দিয়েছেন। রোনালদো দিয়েছেন পর্তুগালে তিনটি আইসিইউ গড়ার খরচ। ব্রাজিল তারকা নেইমার দাঁড়িয়েছেন সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে।
অন্য অঙ্গনের তারকারাও বসে নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে ৩ কোটি রুপি অনুদান দিয়েছে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও বলিউড তারকা আনুশকা শর্মা জুটি। ক্রিকেটেও বেতন কাটার তালিকা বাড়বে। বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা কর্তিত বেতনে পড়তে যাচ্ছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটির বোর্ড ইসিবি।
উল্টো ঘটনাও আছে। সবার আয় তো আর মেসি-রোনালদোদের মতো নয়। খেলাধুলা বন্ধ থাকায় সংকটে পড়া খেলোয়াড়দের দিকেও হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন বোর্ড। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডই (বিসিবি) যেমন দারুণ দুটি উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা পুরুষ-নারী খেলোয়াড়দের এককালীন অর্থ দিচ্ছে।
বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি ও প্রথম শ্রেণির চুক্তির বাইরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে অংশ নেয়া ক্রিকেটারদের এককালীন ৩০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি। নারী ক্রিকেটারদের সেখানে ২০ হাজার করে দেয়ার কথা বলেছেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
করোনা প্রকোপ কাটিয়ে খেলাধুলার বিশ্ব আবার কবে স্বাভাবিক হবে জানা নেই কারও। অন্যসব অঙ্গনের মতো ক্রীড়াবিশ্বেও দীর্ঘমেয়াদী দাগ রেখে যাবে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি। খেলোয়াড়দের বেতন কাটার এই তালিকা যেমন দীর্ঘ হতে থাকবে তাতে, খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানোর তালিকাও সম্ভাবনা নেই ছোট হওয়ার।