বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মতাদর্শিক অবস্থান স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। কারা স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি ও কারা বিপক্ষ শক্তি তা বুঝতে আর কষ্ট হয় না। কারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া অন্তর দিয়ে সম্পন্ন করতে চায় আর কারা এটাকে ইস্যু করে কেবলই রাজনীতি করতে চায় তাও বোধগম্য হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির ক্রিয়াশীল কার্যকর রাজনৈতিক জোটের নাম ১৪ দলীয় জোট। যার নেত্রী শেখ হাসিনা আর তার বিপরীতে প্রতিক্রিয়াশীল কার্যকর রাজনৈতিক জোট হচ্ছে বিশ দলীয় জোট যার নেত্রী খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অবস্থান ও কার্যক্রম জনসাধারণের মাঝে স্পষ্ট ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান ও কার্যক্রমও স্পষ্ট।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা হলেই যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের লোক হওয়া যায় না সেটাও আজ স্পষ্ট। দেশে রাজনীতি করে দেশের মানুষের নেতানেত্রী ও দল হয়ে ওঠাও যে সম্ভব নয় তাও স্পষ্ট। স্বাধীনতার এতবছর জুড়ে রাজনীতি করে, ক্ষমতাসীন দল করে ও বিরোধী দল করেও যে জাতিসত্তার চেতনায় উদ্বুদ্ধ থাকা সম্ভব নয় সেটাও স্পষ্ট।
পাকিস্তানী বর্বরদের হাতে জীবন ও ইজ্জত দিয়েছে তিরিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা বোন। বেগম খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক জাতীয় চেতনা স্পষ্ট করতে আমাদের শহীদদের উপরই আক্রমণ চালালেন।
প্রকাশ্যে বললেন, একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিরিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়েও তার সংশয় রয়েছে। খুনী কিন্তু খুন করে খুনের দায় স্বীকার না করে তার খুনী বিশেষণটা আড়ালে রাখতে চায়।
সে যুক্তিতে পাকিস্তানীরা তিরিশ লাখ শহীদ তথ্য মানবে না এটাই স্বাভাবিক। কারণ শহীদ সংখ্যা যত কম হবে তাদের খুনের বর্বরতা তত হ্রাস হবে। একজন খুন করা আর সহস্র জন খুন করা এক জিনিস নয়। যেমন খুনের দায়ে কারও ফাঁসি হয়, কারও আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়, কারও আবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়।
খুনের ধরণ ও মাত্রা অনুযায়ীই খুনীদের এমন শাস্তির তারতম্য ঘটে। বেগম খালেদা জিয়া কার ইন্ধনে, প্ররোচনায় ও কাকে বড় খুনী হতে ছোট খুনী বানাতে এমন কথা বললেন তাও বুঝা যাচ্ছে। পাকিস্তান খুন করেনি এটা বলা সম্ভব হল না বলেই এই পেঁচানো পথে এলেন। পারলে তিনি সেটাও বলে ফেলতেন যে একাত্তরে কোনো শহীদই হয়নি।
১৪ দলনেত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, জোট ও দলীয় অবস্থানের মধ্য দিয়ে তার জাতিকন্যার ভূমিকা দেশ দুনিয়ায় স্পষ্ট করে তুলছেন। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, যুদ্ধাপরাধ, বিদেশ তোষণ প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার কন্ঠ। আর জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, যুদ্ধাপরাধ ও বিদেশ তোষণের পক্ষে খালেদা জিয়ার সোচ্চার কন্ঠ।
এতদিন ভন্ডামোর আশ্রয় নিয়ে তার আসল রূপটি আড়ালে রেখেছিলেন। তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে তিরিশ লাখ শহীদ কথাটি উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতিতেও তিরিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা এমন কথাও তারা বলে থাকেন। গঠনতন্ত্রের কথা ও মুখের কথাও যে তাদের মূল কথা নয় তাও বুঝা গেল। বিজাতি কন্যা খালেদার রাজনৈতিক মতাদর্শে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতিও যে বৈরিতা রয়েছে তা বোঝা গেল বিএনপি নেতা গয়েশ্বরের বক্তব্যে। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নির্বোধ বলেছেন।
তাদের এই বিজাতীয় মতাদর্শের বিরুদ্ধে জনতা ফুঁসে উঠছে। মানুষ ক্ষুব্ধতার বহির্প্রকাশে খালেদার বাড়ি ঘেরাও করছে। থুথু ছিটাচ্ছে তার এই বিজাতীয় মতাদর্শের দিকে। মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ আইন পাসের দাবী উঠছে। দেশদ্রোহী বিজাতি কন্যা খালেদাকে দেশনেত্রী বিশেষণ দেয়ার আর কারও অধিকার নেই।
সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা হয়তো খালেদার পাশে থাকছে না। হয়তো এমন দাবীও একদিন উঠতে পারে যে দেশদ্রোহী বিজাতি কন্যার বিজাতীয় জোটের অপরাজনীতিতে যেসব মুক্তিযোদ্ধা বিরাজ করবে তাদের ভাতা বাতিল করা হোক।
খালেদা ক্রমশ তার অবস্থান পরিস্কার করে চলছেন। অস্পষ্টতা দূরীকরণের এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুভ লক্ষণই বটে। আমরা আর ভেতর বাহিরের বৈপরীত্য দেখতে চাই না। জাতির সামনে সকলের রাজনৈতিক আসল স্বরূপ উন্মোচিত হোক এটাই প্রত্যাশিত।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)