বিএনপি আসলে কোন পথে এগুতে চায় সমঝোতায় না আন্দোলনে, তা বোঝা মুশকিল। কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দিতে মানবিক দৃষ্টি কামনা করে দলটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করলেন। আবার রিজভী আহমেদ সরকারের বিরুদ্ধে কড়া কথা বলে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করার কথা বললেন। বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথের মিছিলেও ফখরুল আবার অনুরোধের ফোনেও ফখরুল! আগাগোড়া স্ববিরোধিতা ও পথহারা পথিকের ভূমিকায় দলটি কি তবে দিক হারিয়ে ফেলল? সরকারের নানা ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নে কি তারা কোন কর্মসূচী দিতে পেরেছে? যে কোন সরকারকে পতন ঘটাতে হলে দলীয় আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তর করাতে হয়। ইতিহাস সে কথাই বলে। আইয়ুববিরোধী আন্দোলন দল দিয়ে শুরু পরিণতি গণআন্দোলনে, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ দল দিয়ে শুরু পরিণতি গণআন্দোলন ও গণযুদ্ধ, এরশাদবিরোধী আন্দোলন দল দিয়ে শুরু পরিণতি গণঅভ্যুত্থান, ৪ দলীয় জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনেও দল দিয়ে শুরু হয়ে পরে জনতার মঞ্চও গঠিত হয়েছিল। এককথায় সকল আন্দোলনের টার্গেট জনগণ। সরকারও জনগণকে পক্ষে রাখতে চাইবে বিরোধী দলও জনগণকেই তাদের পক্ষে নিয়ে সরকার বিরোধী বানাতে চাইবে। রাজনীতির রীতি এমনটাই নয় কি? বিএনপি কি বিরোধী দল হিসাবে এমন অবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে?
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ডাকলো তারা। সরকারকে অবৈধও আখ্যায়িত করল। কিন্তু সেই অবরোধ কি তারা প্রত্যাহার করলো না অটো প্রত্যাহার হয়ে গেল? তারা নিজ অবস্থানে অনড় থাকতে পারবে না তবে অহেতুক কেন জ্বালাও পোড়াও ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে বার্ন ইউনিটে মানুষের আহাজারি ক্ষেত্র সৃষ্টি করল? আমরা দেখেছি সরকারবিরোধী আন্দোলনে কবি সাহিত্যিক, সুশীল সমাজ, শিল্পী, ছাত্র জনতা ও বিভিন্ন মত পথের রাজনৈতিক দলকে একাট্টা হতে। যেমন এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় গড়ে উঠেছে ৮ দল, ৭ দল ও ৫ দল প্রভৃতি৷ পরবর্তীকালে আবার এই ৮, ৭, ৫ দল সরকারবিরোধিতার প্রশ্নে একমঞ্চে মিলিত হয়েছে। তখন ৭ দলের নেত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। সেদিনের মৈত্রীর টানেও কি এসব মোর্চার কোন দল খালেদা জিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে ?দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও এরশাদবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পাশে মানবিক দৃষ্টিতে দাঁড়াচ্ছে কোন মোর্চা, কোন দল, কোন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। কেন এমন পরিণতি ঘটলো দলটির? একই রকম সিদ্ধান্তে দাঁড়াতে পারছে না নিজ দল বিএনপিও। তারা কেউ রাজপথে কেউ আদালতে কেউ অনুরোধে।
আগাগোড়া স্ববিরোধিতা ও পথহারা পথিকের ভূমিকায় নেমেছে বিএনপি। স্কাইপিতে ও অনলাইন ভিডিও কলে কি কোন দল চলে? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চলে এক পথে, মহাসচিব আরেক পথে। তারেক রহমানের নির্দেশনায় সংসদে শপথ নিতে চলে গেল বিএনপির কয়েকজন সাংসদ। আবার মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেয়ায় সেখানে উপনির্বাচন হল। আবার সেই নির্বাচনেও প্রার্থিতা দিল বিএনপি। তাদের এই সংসদে যোগদান কি খালেদা মুক্তির পথে কোন কাজে লাগল কিংবা এতে বিএনপির কোন দলীয় লাভ হলো কি? ঢাকা সিটি নির্বাচনে অংশ নিল আবার ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে দলটি হরতাল দিল। মানুষ টেরই পেল না এই হরতাল। রাজধানীতে গাড়ি ঘোড়া, অফিস আদালত যথারীতি চলল। এখন আবার চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও তারা প্রার্থিতা ঠিক করছে। তবে কি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকে খালেদা মুক্তির লড়াইয়ের দ্বিতীয় পর্ব বলবে তারা? ঢাকা সিটির নির্বাচনে হয়তো খালেদা মুক্তির কথা বলে নেতাকর্মীদের ভোট দিতে আগ্রহী করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাও কি কোন কাজে দিলো? বিএনপির নেতা-কর্মীরা কি ভোট কেন্দ্রে গেল? হয়তো এখানেও দলটি বলবে সরকার ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়নি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)