আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। যখন করোনাভাইরাস সারাবিশ্বকে গ্রাস করে ফেলেছে, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ‘প্রায় ঘরবন্দি’ করে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিপন্ন করে তুলেছে; তখন এই প্রতিকূলতার মধ্যেই দিবসটি পালিত হলো।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘কোভিড-১৯ এবং আদবাসীদের স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন’ (COVID-19 and indigenous peoples’ resilience)। নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী এক প্রতিপাদ্য। এর মাধ্যমেই স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে, অস্বাভাবিক, প্রতিকূল এই বিশ্ব পরিস্থিতি থেকে আদিবাসীদের (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী) স্বাভাবিক জীবনে ফেরাটাই কঠিন চ্যালেঞ্জ।
আমরা জানি, এমনিতেই বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃ-গোষ্ঠীগুলো নানান সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সদস্যই অন্যের খেত-খামার-প্রতিষ্ঠানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এর মধ্যে আবার সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে নতুন করে বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে তারা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় কাজ হারিয়ে শূন্য হাতে এলাকায় ফিরে যেতে হয়েছে তাদের অনেককে।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক পরিবারে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতারা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থাকার কারণে করোনাকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে থাকা নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ কিছুটা হলেও সরকারি সাহায্য পেয়েছে। কিন্তু সমতলে থাকা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বেশির ভাগ সদস্যই তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এই বিষয়টা সরকারের নীতি-নির্ধারকরা গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আমরা আশা করি। কেননা এমনিতেই তারা নানা বৈষম্যের শিকার। করোনাকালের নতুন বৈষম্য তাদের অস্তিত্বকে আরও হুমকিতে ফেলে দেবে।
এটা ঠিক,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকারের বহু উদ্যোগ আছে। কিন্তু তারপরও দেশের মূল উন্নয়ন এবং অগ্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না তারা। আর এ কারণে আরও পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে তাদের। এরই মধ্যে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ভূমির অধিকার অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এছাড়াও আছে সংখ্যাগুরু গোষ্ঠীর প্রভাবশালীদের নিপীড়ন, নির্যাতন আর ভূমি দখলের মতো মারাত্মক ঘটনা।
রাষ্ট্রকে নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে এসব বৈষম্য থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। কেননা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে নিশ্চিতভাবেই তারা হারিয়ে যাবে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সেটা আমরা দেখতে চাই না।
আমরা মনে করি, সবার অধিকার রক্ষা করা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূলমন্ত্র হওয়া উচিৎ। তাহলেই সব ধরনের বৈষম্য রোধ করা সম্ভব।