মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানতে পেরেছি। প্রস্তাবগুলো হলো: ১. মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন, নীতি ও আচরণ বন্ধ করতে হবে । রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। ২. মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য ফিরে যাওয়ার মতো সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ৩. জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশের আলোকে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচাতে হবে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, গণধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী নানা অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছিল বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার নানা তথ্য উঠে এসেছে ওইসব প্রতিবেদনে। রাখাইন পরিস্থিতির কারণে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশও করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে গত বছরের অাগস্ট থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, যাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলেছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে তারা। সংস্থাটির আবেদন আমলে নিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের বিচার করার পক্ষে মতামত দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট- আইসিসি।
বিশ্বসম্প্রদায় যখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করছে তখন সেই অভিযোগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে দেশটি। তারা পাল্টা অভিযোগ করছে সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের। মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং রোববার এমনকি জাতিসংঘ, আইসিসি’র বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ তুলেছেন।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি মিয়ানমার স্বীকার করলেও তাদের ফেরত নিতে গড়িমসি করছে। দুই দেশের যৌথ কমিশন রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে চুক্তিও করেছে কিন্তু ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করছে না মিয়ানমার। এরইমধ্যে রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার এক বছর পার হয়ে গেছে। ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে আশ্রয় দেয়া দেশের জন্যও বিষয়টি অস্বস্তিকর। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা থাকলেও দীর্ঘ সময় এত সংখ্যক জনগোষ্ঠীর ভার বহন করা ঝুঁকিপূর্ণ।
বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের মূল ভূমিতে ফিরে যাক। তাদের ফিরে যাওয়া ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এগিয়ে আসায় তাদেরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ৭ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমরা আরো সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।