নিজেদের সুবিধার জন্য দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশ পরিপালনের নামে মিথ্যা তথ্য দেয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বছরে একটি ব্যাংককে ২৬৩টি রিপোর্ট দিতে হয়। কিন্তু তাদের পাঠানো এসব প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল থাকে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘কস্টস ফর কমপ্লায়েন্স উইথ রেগুলেশনস ইন ব্যাংকস’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকের কমপ্লায়েন্স (আদেশ পালন) পরিপালনের চাপ ও ব্যয় উভয়ই বাড়ছে। ব্যাংকের কমপ্লায়েন্স পরিপালনে বর্তমানে ১৫টি আইন বা অধ্যাদেশ, ৪৬টি গাইডলাইন, ১০টি রেগুলেশন, ৪৭৮টি প্রজ্ঞাপন আছে। সরকারি-বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা পরিপালনে বছরে গড়ে ২৬৩টি রিপোর্ট দিতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। একই সঙ্গে এ খাতে খরচও বাড়াতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে।
এতে আরো বলা হয়, ৯১ শতাংশ ব্যাংকারের ধারণা কমপ্লায়েন্স পরিপালন করলে ব্যাংকের ঝুঁকি কমে আসে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো এসব প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল থাকে না। ব্যাংকগুলো তাদের সুবিধার্থে অসত্য তথ্য দেয়। এটি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে রিপোর্টের সংখ্যা কমিয়ে সমন্বয় সাধন করতে হবে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, ব্যাংকে নিয়ম কানুন মেনে ব্যবসা করে আসছে। অনেকের কমপ্ল্যায়েন্স নিয়ে বক্তব্য দেয় যা সঠিক নয়। কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, কমপ্লায়েন্সের খরচ না কমিয়ে যৌক্তিক করতে হবে। কিছু প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ যেগুলো আলাদা করে হিসাব নিকাশ করলে কমপ্ল্যায়েন্সের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। কমপ্লায়েন্সের কোন বিকল্প নেই। এটি ব্যাংকের কর্মীসহ সব পর্যায়ের অংশীজনদের স্বার্থ রক্ষা করে। এজন্য খরচ না কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে করতে হবে।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে এ কারণে ব্যাংকের রিপোটিংয়ে এখন কোন সমস্যা নেই। নন-কমপ্লায়েন্স থাকার সুযোগ নেই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাত থেকে আটটি বিভাগ একই ধরণের তথ্য চায় এটি সমন্বয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি বলেন, ব্যাংকগুলোর সুদ কমানোর কারণে কমপ্লায়েন্সের মেইনটেইন করা কঠিন বলে অভিযোগ করেছে, যা সঠিক নয়। পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সুদ কমিয়ে ঋণ নিয়েছে। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে। সবার আগে জনগণের স্বার্থ দেখতে হবে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন সঠিকভাবে পরিপালন করতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী।