প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনায় কৃষি খাতের ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে। ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ মাস মেয়াদি এ ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৪ শতাংশ।
এর আগে ১২ এপ্রিল কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষকের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে দেশের কৃষি খাত দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই খাতে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশের কৃষি খাত সার্বিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। তাই কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণে ইচ্ছুক বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণমূলক চুক্তি স্বাক্ষর করবে। সেই চুক্তির মাধ্যমে এই স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণ পূর্বক মাসিক ভিত্তিতে পুনঃঅর্থায়নের জন্য আবেদন করা যাবে। ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ও সব ক্ষমতার ভিত্তিতে কৃষিঋণ বিভাগ থেকে ব্যাংকগুলোর অনুকূলে তহবিল বরাদ্দ করা হবে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পর বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে পর্যায়ক্রমে তহবিলের সমপরিমাণ অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শস্য ও ফসল খাতে চলমান ঋণপ্রবাহ পর্যাপ্ত থাকার দরুণ এ খাত অপেক্ষা কৃষির চলতি মূলধন ভিত্তিক খাতগুলোতে অধিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ খাতগুলোতে ঋণের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। এর প্রেক্ষিতে চলতি মূলধন ভিত্তিক কৃষির অন্যান্য খাতে (হর্টিকালচার অর্থাৎ মৌসুম ভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাত) পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশের সার্বিক কৃষিখাত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বিদ্যমান কৃষি ও পল্লি ঋণ নীতিমালায় বর্ণিত বিধিবিধানসমূহ অনুসরণ করে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের আলোকে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে বিবেচনা করবে এবং প্রতিটি ঋণের জন্য পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করবে।
ঋণের মেয়াদ
ব্যাংকগুলো পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের তারিখ হতে অনধিক ১৮ মাসের (১২ মাস + গ্রেস পিরিয়ড ৬ মাস) মধ্যে আসল এবং সুদ (বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ১% সুদ হারে) পরিশোধ করবে। আর ব্যাংকগুলোতে গ্রাহক পর্যায়েও ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ঋণ গ্রহণের তারিখ হতে ১৮ মাস (৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ)।
সুদ হার
এ স্কিমের আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক হতে নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদ হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। আর গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। এই সুদ হার চলমান গ্রাহক এবং নতুন গ্রাহক উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
যেসব খাতে ঋণ বিতরণ
শস্য ও ফসল খাত ছাড়া কৃষির অন্যান্য চলতি মূলধন নির্ভরশীল খাতসমূহ (হর্টিকালচার অর্থাৎ মৌসুম ভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাত)। তবে, কোনও একক খাতে ব্যাংকের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ঋণের ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে না।
এছাড়া যেসব উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কৃষকের কাছ থেকে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ক্রয় করে সরাসরি বিক্রয় করে, তাদেরকেও এ স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য বিবেচনা করা যাবে।
তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিতে পারবে না।