চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কুষ্টিয়ায় রাতের আঁধারে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর

আনিসুজ্জামান ডাবলু, কুষ্টিয়া থেকে:
ভাস্কর্য নিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর ক্রমাগত হুমকির মধ্যেই কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।

শুক্রবার দিবাগত রাতের আঁধারে ওই ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখমণ্ডল ও বাঁ হাতের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা।

শনিবার সকালে বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে শহরের বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট চত্বর ও থানা মোড়ে আওয়ামী, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে শহরের ব্যস্ততম পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ চলছে।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানান, একই বেদিতে বঙ্গবন্ধুর তিন ধরণের তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই বেদিতে জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্যও নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের পথে।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত জানান, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার দোলাইপাড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসলামপন্থী কয়েকটি দল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়।

তেমনই একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকায় খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরির তীব্র সমালোচনা করে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবে এবং ওই বুড়িগঙ্গায় ভাস্কর্য ছুঁড়ে ফেলবেন।’

একইদিন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম একটি অনুষ্ঠানে মামুনুল হকের সুরেই কথা বলেন।

জাতির পিতার ভাস্কর্য নিয়ে এমন বক্তব্যের সর্ব প্রথম তীব্র বিরোধীতা করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি পরের দিন ১৪ নভেম্বর বলেন, ‘যতটুকু বলেছেন ক্ষমা চেয়ে সাবধান হয়ে যান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করলে ঘাড় মটকে দেবো।’

কিন্তু এরপর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক ওয়াজ মাহফিলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী ভাস্কর্য নির্মাণের আবারও বিরোধীতা করে বলেন, ‘‘কোনো ভাস্কর্য তৈরি হলে তা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হবে।’’

ভাস্কর্য নিয়ে ওই ধর্মীয় নেতাদের এমন উগ্র বক্তব্যের পর তাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৮ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’।

তার দুইদিন পর ১ লা ডিসেম্বর মাঠে নামে দেশের ৬০টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের সংগঠন। নেতৃবৃন্দ দাবি তোলেন, বঙ্গবন্ধু ও সংবিধান অবমাননাকারী জুনাইদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের গ্রেপ্তার করতে হবে।

প্রথম দিকে অনেকটা নীরব থাকলেও পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়। পাশাপাশি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।