গত ১১ সাল থেকে ঢাকায় কুকুরের টিকা কার্যক্রমের বন্ধ থাকায় জলাতঙ্কের ঝুঁকিতে পড়েছে রাজধানীবাসী। বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে প্রতিদিন গড়ে তিন’শ মানুষ জলাতঙ্কের টিকার জন্য যাচ্ছেন মহাখালির সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে। সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, মানবিক ও পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় শীঘ্রই উদ্যোগ নেবেন তারা।
২০১১ সালের শেষ দিকে দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌর সভার সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চুক্তি করে সারা দেশের বেওয়ারিশ কুকুরের মধ্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেবার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ঐ বছরের ৩০ নভেম্বর উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই ভাগে ভাগ হয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। পরে ২০১২ সালের পহেলা এপ্রিল ঢাকা শহরে বেওয়ারিশ কুকুরদের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক দেয়ার জন্য এই দুই সিটির সাথে একটি বেসরকারী সংস্থা সমঝোতা হয়। কিন্তু ঐ কার্যক্রম সফল হয়নি।
ঢাকা সিটি দক্ষিণের মেয়র সাইদ খোকন বলেন, কুকুরের প্রজনন নিয়ন্ত্রন করতে বেসরকারী সংস্থা অভয়ারণ্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণের সঙ্গে কাজ করে চলছে। সংস্থাটির থেকে বলা হয়েছে তাদের একটা জায়গা দরকার। আমরা চেষ্টা করছি তাদের একটা ক্লিনিকের মতো কিছু করে দেয়ার, যাতে তারা সঠিকভাবে কাজগুলো করতে পারে।
পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ ঐ দুই সিটির প্রধান নিবার্হীদের ব্যাপক হারে বেওয়ারিশ কুকুরদের টিকা দেবার প্রস্তাবনা দিলেও অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেটা আর এগোয়নি। একই সাথে দেশে কুকুর নিধন বন্ধে হাইকোর্টও একটি নির্দেশনা রয়েছে। এতে রাজধানীতে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যায়। এখন আবারো কুকুরের টিকা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, ঢাকা শহরের কুকুরদের জলাতঙ্কের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা ট্রায়াল ভিত্তিতে করব।এরপর কুকুরদের উপর প্রথমবারের টিকা কার্যক্রম কতোটা কার্যকর হল সেটা দেখার পরে আমরা ঢাকা শহরের অন্যান্য সকল কুকুরদেরকে এই টিকা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসব।
বেওয়ারিশ কুকুরদের কামড় খাওয়া তিন’শ বেশি মানুষ জলাতঙ্কের টিকার জন্য প্রতিদিন রাজধানীর সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে আসছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, সারাদেশে বছরে প্রায় তিন লাখ মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হয়। এর মধ্যে রাজধানীতে এই সংখ্যা দেড় লাখ। প্রতিদিন এই হার বাড়ছে। জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যুও হচ্ছে।
সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা.আঞ্জুমান আরা বলেন, কুকুরের কামড়ের জায়গাটাও ভালো করে ফেনা তুলে সাবান দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হয়। এরপর আয়োডিন সলিউশন দিতে হয়। এটা দিলে ভাইরাসটা তখনই মরে যায়।
রাজধানীতে বেশির ভাগ কুকুরই বেওয়ারিশ। ঐসব কুকুরেরা খাবারের অভাবে ক্ষিপ্ত থাকে। মানুষও তাদের প্রতি তেমন সদয় ব্যবহার না করায় ক্ষুধার্ত ও ক্ষিপ্ত কুকুরেরা মানুষকে আক্রমণও করছে বেশি।