রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্বল্প সময়ে অফিস ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থানের নিরীহ লোকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র।
তারা প্রতারণা করতেই ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সির অফিস নিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জাল ভিসা ও জাল স্মাট কার্ড প্রস্তুত করে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র তৈরি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করছিল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকা থেকে কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশে জাল ও বিএমইটির মাধ্যমে মানব পাচারের অপরাধের দায়ে প্রতারক চক্রের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. শরীফুল ইসলাম ওরফে সজীব, গোলাম মোস্তফা কামাল, মোখলেছুর রহমান, মো. আশাদুল হক, মো. আলতাফ হোসেন রাজিব, মো. আসাদুজ্জামান বাবু, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. আব্দুল কাদের সরকার ওরফে নূর নবী, আবুল কালাম আজাদ ওরফে হাসান ওরফে বুলেট।
এসময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ২৪টি পাসপোর্ট (যার মধ্যে ৯টি জাল ভিসা সহ), দশটি বিভিন্ন দেশের জাল ডিমান্ড লেটার, দু্ইটি সিল, পাঁচটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড, একটি কম্পিউটার ও সাত লাখ ৯৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে আয়োজিত সিআইডির সদর দপ্তরে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. এনামুল কবির জানান, সাতজন ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা গতকাল নিকুঞ্জ থেকে এই চক্রটিকে গ্রেপ্তার করি। আসামিরা একটি প্রতারক ও জাল চক্রের সদস্য। তারা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সল্প সময়ে অফিস ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থানের নিরীহ লোকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল।
চক্রটি প্রতারণা করতেই ‘সেবা’ নামের একটি ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সির অফিস নিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জাল ভিসা ও জাল স্মাট কার্ড প্রস্তুত করে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র তৈরি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছে আমাদের কাছে অভিযোগ করা সাতজন ভিকটিমের কাছ থেকে চার লাখ ২০ হাজার টাকা করে মোট ২৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়াও তারা আরো ১৫ থেকে ২০ জনের কাছ থেকে মোট ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ চক্রটি কতোদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে জানতে চাইলে এনামুল কবির বলেন, তাদের ভাষ্যমতে তারা তিন মাস ধরে ঢাকায় স্বল্প সময়ে অফিস ভাড়া করে এ প্রতারণা করত। মাস খানেক পর পরই তারা অফিস ও এলাকা পাল্টাত। এ চক্রের কোন যোগ্যতা নেই। কিন্তু তাদের একজন মাস্টার মাইন্ড রয়েছে, এছাড়াও তাদের পেছনে গডফাদার যারা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভিকটিমরা নিজেদের টাকাগুলো বুঝে নিতে আইনগত ভাবে আদালতে আবেদন করবে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ পেনাল কোড এবং বাংলাদেশ পাসপোর্ট আদেশ ১৯৭৩ এর ১১(৩) ধারায় খিলক্ষেত থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছেও বলে জানান সিআইডির এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।