শেখ মোহাম্মদ সুলতান, নামটি বেশ অপরিচিত মনে হবে। এস এম সুলতান নামেই তিনি পরিচিত। বাংলাদেশে শিল্পকর্ম বলতেই প্রথম যে নামটি মনে আসে সেটি তিনিই। বাংলাদেশের চারুশিল্পে তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তী।
সুলতানের জন্ম হয়েছিলো এক দরিদ্র কৃষক-পরিবারে। তার বাবা শেখ মোহাম্মদ মেসের আলী পেশায় ছিলেন কৃষক। পাশাপাশি রাজমিস্ত্রীর কাজও করতেন। শৈশবে পরিবারের সবার কাছে লাল মিয়া নামেই বেশি পরিচিত ছিলো সুলতান।
পড়াশোনার দৌড় বেশিদূর না এগোলেও নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিজেকে এক উন্নত অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন এস এম সুলতান।
আর সেটা হয়তো ছোটবেলায় বাবার ঘরামীর কাজে সহযোগী হওয়ার কারণেই। সেই সময়েই বাবার সহযোগিতায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে শুরু হয় সুলতানের আঁকা-আঁকির কাজ।
রুগ্ন বাঙালী কৃষককে পেশিবহুল শক্তিশালী বীজ বপনকারী হিসেবে তাঁর চিত্রকর্মে তুলে ধরেছেন। বাঙালীর আদি গ্রামীণ সমাজের যে চিত্র তিনি এঁকেছেন, তা যেনো আমাদের স্বপ্নেরই প্রতিফলন। তাঁর ছবিতে বরাবরই উঠে এসেছে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণীর দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হাল।
শুধু ছবি আঁকাই নয়, তিনি ছিলেন একজন সুর সাধক এবং বংশীবাদক। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৮২ সালে তাকে ‘এশিয়ার ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে ঘোষণা করে। তাছাড়া একুশে পদক, চারুশিল্পী সংসদ সম্মান ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারও অর্জন করেছেন তিনি।
১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলে জন্মগ্রহণ করেণ এই গুণী শিল্পী। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন এই বিশ্ববরেণ্য এস এম সুলতান। নড়াইলের চিত্রা নদীর ধারে তিনি গড়ে তুলেছিলেন শিশুদের আঁকাআঁকির একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি একটি নৌকা নির্মাণ করেছিলেন। যদিও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এবং সুষ্ঠু তদারকির অব্যবস্থাপনায় এস এম সুলতানের প্রতিষ্ঠানটি এখন নানা সংকটে জর্জরিত। এই চিত্রা নদীর পাড়ে শুয়ে আছেন মহান এই শিল্পী।