পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের খাবার স্যালাইনসহ আইভি স্যালাইন ও ট্যাবলেট কিনতে হচ্ছে বাইরের ফার্মেসি থেকে। গত এক সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা চললেও স্বাস্থ্য প্রশাসকের দাবি, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন ওষুধ কিংবা স্যালাইন সংকট নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মে থেকে ১৫ মে বিকাল পর্যন্ত কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। কলাপাড়া, কুয়াকাটা ও মহিপুর হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে অন্তত পাঁচ শতাধিক রোগী।
কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোস্তফা সিকদারের (৬০) স্ত্রী কোহিনুর বেগম জানান, তার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আটটি স্যালাইন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়েছে একটি স্যালাইন। এমনকি মেট্রিল সিরাপ, ইনজেকশন ও খাবার স্যালাইনও কিনেছেন বাইরের ফার্মেসি থেকে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আবু কালাম খাঁর (৪৫) স্ত্রী সাহিদা বেগম বলেন, হাসপাতাল থেকে কোন স্যালাইনতো দুরের কথা একটা ট্যাবলেটও দেয়নি।
অপর চিকিৎসাধীন রোগী রিপন শীল (৩৬) জানান, তাকে সাতটি স্যালাইন কিনতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়েছে একটি স্যালাইন। বিল্লাল হোসাইন নামের একজন (৪২) জানান, তাকে শুধু দুটি নাপা ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে। শুক্কুর মিয়া (২৯) জানান, তিনি বাইরে থেকে কিনেছেন সাতটি স্যালাইন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত দুই বছরের শিশু সাজিমের মা নিলুফা বেগম জানান, দুটি স্যালাইন দেয়া হয়েছে ছেলেকে। দুটিই বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালে নাকি কিছুই নেই। সবকিছুই শেষ। ডাক্তার ও নার্সদের কাছে ওষুধ চাইলে তারা বলে নেই। বাইরে থেকে কিনতে হবে। এভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত প্রতি রোগীকে অন্তত চার-পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ, স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।
একাধিক রোগী জানান, দুপুর একটা বাজলেই আর কোন ডাক্তার পাওয়া যায় না। সকালে একবার এসে দেখে যায়, আবার আসে রাত ৯টা-১০টার পর। দুপুরে বা বিকালে জরুরি প্রয়োজনে রোগী অসুস্থ হলে বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে হাসপাতালের ওই ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হয়। সেখানে আবার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভিজিট দিতে হয়।
‘আর নার্সদের তো প্রতি স্যালাইন পুশ করতে ৫০/১০০ টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে স্যালাইন পুশ করে না, দুর্ব্যবহার করে। এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হলেও মানসিক অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে তাদের স্বজনরা।’
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার জানান, হাসপাতালে কোন স্যালাইন ও ওষুধ সংকট নেই। তবে রোগীরা কেন পাচ্ছেন না বিষয়টি দেখবেন বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন স্টোর কিপার সরকারি ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। ঐ হাসপাতালের ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। কয়েকজন নার্স, ব্রাদার ও ডাক্তারের সমান্বয়ে একটি সিন্ডিকেটের অপতৎপড়তার কাছে অনেকটা অসহায়ের মত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে। যদিও এবিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চাচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ।