Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

করোনা মোকাবেলায় আমরা আদৌ প্রস্তুত?

করোনাভাইরাস

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কানাডাফেরত এক রোগী। তার রোগ ছিল গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল জটিলতা। কিন্তু করোনা সন্দেহে ভীত হয়ে ডাক্তার বা নার্স কেউই তাকে চিকিৎসা দেয়নি।

দেশের সবচেয়ে বড় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করা হয় না। তাদের কোনো কর্মীর নেই নিরাপত্তা স্যুট। সবমিলিয়ে যতক্ষণে তারা চিকিৎসা দিতে এলেন, ততক্ষণে রোগীর শরীরে আর প্রাণ নেই।

আবার জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন বাহরাইনফেরত আরেক প্রবাসী। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওয়ার্ডে থাকা অন্য রোগীরা। সরে পড়েন দায়িত্বরত নার্সরাও। পরিস্থিতি দেখে হাসপাতাল থেকেই পালিয়ে যান ওই রোগী।

এ দুটি ঘটনাই গতকাল রোববারের। একটি ক্ষেত্রে ডাক্তার-নার্সরা নিজেরাই চিন্তিত আর অন্য ক্ষেত্রে রোগী ভীত। করোনার ভয়ে রোগীকে চিকিৎসা দিতেই অপারগ ডাক্তাররা।

এমন পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো? করোনা মোকাবেলায় হাসপাতালগুলোতে আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড থাকার কথা অনেক আগে থেকেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক সে কথা বহুবার বলেছেন। তারপরও সেটা নেই কেন? আর যদি আইসোলেশন ওয়ার্ড থাকেই, তাহলে সেখান থেকে রোগী পালায় কিভাবে? সব মিলিয়ে করোনা মোকাবেলায় আসলেও কি আমরা প্রস্তুত?

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত রোগী বা আক্রান্তের সংখ্যা এমন হয়নি যেটা আইইডিসিআর করতে পারবো না।  তাই অন্য কোথাও করোনার পরীক্ষা করানোর দরকার নেই। তবে দেশের হাসপাতালগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। খুব দ্রুতই সেই সমন্বয় করা হবে। সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কিছুটা প্রস্তুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। নেয়া হয়েছে আলাদা প্রস্তুতিও। সেই বিষয়ে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, করোনা মোকাবেলায় আউটডোরে সর্দিকাশির আলাদা কর্নার করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। আর এরপর তিনদিন হলো বহির্বিভাগ কর্নারেই মেডিসিনের জন্য দুটি আলাদা রুম, শিশুদের জন্য দুটি আলাদা রুম আর ইএনটির জন্য ২টি আলাদা রুম করা হছে। এছাড়া ইমার্জেন্সিতে অস্থায়ী আইসোলেশন কর্নার করা হয়েছে।

কর্নার না হয় করা হলো কিন্তু ডাক্তার ও নার্সদের প্রস্তুতি কতটা। সেই বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসাররা পার্সোনাল প্রটেক্টিভ কিট পরে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। হাসপাতালে তৈরি আছে অ্যাম্বুলেন্সও। কোনো রোগীকে বহন করতে হলে অ্যাম্বুলেন্সে যারা থাকছেন তারা পার্সোনাল প্রটেকশনের কিটগুলো ব্যবহার করছেন। এবং রোগী পরিবহন শেষে অ্যাম্বুলেন্সটিও জীবাণুমুক্তকরণ করা হচ্ছে নিয়ম মেনে।

এই প্রস্তুতিযথেষ্ট কী? নাকি নজর দিতে হবে আরো বেশি? বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে কোন ক্ষেত্রে?

এর উত্তরে বিএসএমএমইউয়ের সাবেক ভিসি এবং স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ড. রশিদ ই মাহবুব বলেন, এই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে প্রথম যে প্রস্তুতি থাকে সেটাই শেষ পর্যন্ত থাকে না। মহামারী রোগগুলোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির দরকার। তাই এখন দেশে যে পরিস্থিতি তাতে এই প্রস্তুতি যথেষ্ট হলেও পরিস্থিতি খারাপ হলে তা পর্যাপ্ত হবে না। করোনার জন্য মূলত চারটি দিকে নজর রাখা দরকার- কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও চিকিৎসা।  সময়ের প্রয়োজনে এই চারটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন তো আনতে হবে সঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে যেন যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা যেন অসুস্থ না হন। তারা অসুস্থ হলে ম্যাসাকার পরিস্থিতি হবে।  তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

পরিস্থিতি জটিল হলে আমরা কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো? উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় চেষ্টা করছে। কিন্তু নানান বিষয়ে ঘাটতিতো আছেই। এসব ঘাটতি বিশ্বব্যাপিই আছে।’

‘‘তবে সেসব দেশ ধনী বলে তারা শেষ পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিতে পারছে, আমরা কতটা পারবো সেটা দেখার বিষয়। এখন গণমাধ্যমকর্মীদেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে। গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে, তা না হলে আরো বেশি আতঙ্ক ছড়াবে।’’

Exit mobile version