চীনের উহান শহর থেকে বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের ঘাম ঝরছে ভাইরাসটির কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারে কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছেনা৷ ভাইরাসটির উৎপত্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা ধরনের মত দিচ্ছেন৷ বিশ্বের বিজ্ঞানী এবং ভায়োরোলজিস্টরা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষনা। কেউ বলছেন রাসায়নিক গবেষণাগারে তৈরি হয়েছে এই করোনা নামের জৈব মারণাস্ত্রটি। আবার কেউ বলছেন প্রাকৃতিকভাবে এই ভাইরাসের জন্ম।
দু’পক্ষের যুক্তি তর্কের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এক তত্ত্ব দিলেন ভারতের চেন্নাইয়ের বিজ্ঞানী ড.কে এল সুন্দর কৃষ্ণা৷ তিনি বলেন,কোভিড-১৯ ভাইরাসের সঙ্গে সূর্যগ্রহণের যোগসূত্র রয়েছে।
বিজ্ঞানী কৃষ্ণা বলেন, এই জীবাণুর উৎপত্তি কোন রাসায়নিক ঘটনা নয় বরং মহাজাগতিক ঘটনার ফলেই এই মহামারীর সৃষ্টি৷ মহাকাশ থেকেই এসেছে এই মরণ ভাইরাস। বিজ্ঞানী কৃষ্ণার দাবি, ২৬ ডিসেম্বর ছিল সূর্যগ্রহণ। তারপর থেকেই এমন একটা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের স্তরে একধরণের রাসায়নিক বদল ঘটে । আর তা থেকেই এই ভাইরাসটির জন্ম হয়। আবার পরবর্তী সূর্যগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই পৃথিবী থেকে এই করোনা ভাইরাস বিলীন হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২১ জুন একই সঙ্গে সূর্যের বলয়গ্রাস ও পূর্ণগ্রাস গ্রহণ হবে। সেদিনই এই জীবাণুর দাপট শেষ হবে।
ড. কৃষ্ণা তার মহাজাগতিক তত্ত্বের ব্যাখ্যায় বলেন, সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবীর বায়ূমন্ডলে তড়িতাহত কণাদের মধ্যে এক বড়সড় রাসায়নিক বদল হয়েছিল। এমন এক বায়ো-নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকশনের কারণে নিউট্রনের বদল শুরু হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের নিউক্লিয়াস তৈরি হয়। এই বায়ো-নিউক্লিয়ার ইন্টারঅ্যাকশনই ভাইরাস তৈরির অন্যতম কারণ। কিন্তু ভাইরাসটির উৎপত্তি যেভাবেই হোক না কেন তা যে গোটা পৃথিবীকে আতঙ্কিত করে তুলেছে তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই৷এনিয়ে বিশ্বের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও চিকিৎসাবিদরা কি একটা ভার্চুয়াল বৈঠক করতে পারেনা? আমেরিকায় ডেক্সামেথাসোন ট্যাবলেট নিয়ে হুলস্থূল৷ বাংলাদেশেও এ ট্যাবলেট কেনার ধূম পড়ে গেছে৷ ভেকসিন নিয়েও বিভিন্ন দেশের পৃথক উদ্ভাবনী তৎপরতার খবর শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু বৈশ্বিক সমন্বয় কোথায়? কবে ও কিভাবে পাবে ভ্যাকসিন? পৃথিবীর সব দেশ কি একযোগে পাবে?না কেউ আগে পাবে কেউ পরে পাবে?
করোনা মোকাবিলার জন্য দেশে দেশে চলছে লক ডাউন, সাধারণ ছুটি, রেড জোন প্রভৃতি৷ কোন দেশ এসবে সফল হলো কোন দেশ বিফল৷ বৈশ্বিক সমন্বয় থাকলে ফলাফলের দিকটা কি সবার জন্য পজিটিভ হতোনা?কী হলো বাংলাদেশে?লকডাউন খুলে দেয়ার পর বেড়ে গেলো করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার? এ নিয়ে কী বলছে দেশটির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী? লকডাউনের পরে ঢাকা শহরকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করার পদক্ষেপের সফলতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ রুহুল হক৷ তিনি মনে করেন যে, পূর্ব রাজাবাজারে যে লক ডাউন করা হয়েছে তা কোন কাজে আসছে না। একইভাবে এই জোন ভিত্তিক লক ডাউন কতটুকু কাজে দেবে, কে লক ডাউন করবে সেটা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে। এটা আসলে বাস্তবে কোন উপকারে আসবে কিনা তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
তিনি আরও বলেন, ‘এতগুলো এলাকাকে লক ডাউন করার মতো সামর্থ্য এবং শক্তি আছে কিনা সেটি একটি বড় দেখার বিষয।’ তিনি মনে করেন, এখন বাংলাদেশে সীমিত সময়ের জন্য হলেও পূর্ণাঙ্গ লক ডাউন বা কারফিউ দরকার। তা না হলে মানুষ বাঁচানো কঠিন হবে।
আমাদের রেকর্ড পরিমাণ আক্রান্তও হচ্ছে। আর আক্রান্ত বাড়লে মৃত্যু বাড়বে। এটা অনিবার্য, এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। কাজেই এখানে যারা ভ্রান্তিবিলাসের মধ্যে আছেন তারাই বলছেন বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা কম হবে। তারা করোনা সঙ্কট মোকাবিলার ক্ষেত্রে আরেকটি ভুল করছেন।সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে কারা ও কেন এই আত্মঘাতী ভ্রান্তিবিলাসে রয়েছেন?এই ভ্রান্তিবিলাসের ঘোর কি তবে সহসা কাটছেনা?
এদিকে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি সত্ত্বেও করোনা নিয়ন্ত্রণে আর লকডাউন প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি বিশেষজ্ঞ ও ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক অ্যান্থনী ফাউচি।
তিনি বলেন, শিগগিরই বিশ্ব একটি ভ্যাকসিন পাবে বলে আশা করছি, যা মহামারির অবসান ঘটাবে। এছাড়া ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল উৎসাহব্যঞ্জক বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ তথ্য কতোটা আশাব্যাঞ্জক? আর এই আমাদের দেশ কতটা আশাবাদী?বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন করোনার স্থায়িত্বকাল তিন বছর হবে৷ তবে কি আমরা তিন বছরের মধ্যেও ভেকসিন পাচ্ছিনা?ভেকসিন প্রাপ্তি নিয়ে ডিজি মহোদয়ের কী বক্তব্য?তিন বছর স্থায়িত্বকালের তথ্য তিনি কোথায় ও কিভাবে পেলেন?তবে কি ভেকসিন তিন বছর পর বেরোচ্ছে এমন কোন তথ্য তিনি পেয়েছেন? ভেকসিন না বেরোলেও বাংলাদেশ এই সময়ের মধ্যে তা পাবেনা এমন কোন আভাস পেলেন তিনি?পেলে তা কিভাবে ও কোথা থেকে পেলেন ? এর তথ্যসূত্র জানা আবশ্যক৷
করোনা মোকাবেলায় কি রাজনীতিবিদরা নীতিনির্ধারনে নাকি আমলারা? সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যেতো কোন সমন্বিত উদ্যোগও দেখা যাচ্ছেনা৷ সমন্বিত উদ্যোগ নেই আমলাদের মধ্যেও৷ সংকটের উৎস ও গতি প্রকৃতি না বুঝে কি সেজন্যই ভুল এবং বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। আর সেজন্যই কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ , বাতিল ও আবার গ্রহনের ঘটনা ঘটছেনা? লকডাউন ও সাধারণ ছুটিতে কি কোন লাভ হলো?ছুটি পেয়ে কর্মস্থলে না থেকে সরকারী কর্মচারীরা বাড়িতে ছুটে গেলো৷ আবার বাড়ি থেকে অফিসে ছুটে গেল৷ কেন এ ছুটি কি কোন আনন্দের ছুটি ছিল?এমনটি যারা করলো কেন তাদের বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হলোনা?আর গার্মেন্টস গুলো কী করলো?সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা নিলো আবার সরকারী নির্দেশনা মানলোনা৷ শুরু করলো শ্রমিক ছাঁটাই৷ সরকার কেন পারলোনা তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতা ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে?
দিনে দিনে করোনা সংক্রমন ও মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে৷ সেই সাথে চলছে সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তি,ওষুধ বিভ্রান্তি,করোনার উৎস ও স্থায়িত্ব বিভ্রান্তি, ভেকসিন বিভ্রান্তি৷ এত বিভ্রান্তির ভিড়ে আমাদের ভবিষ্যত পরিণতি কী?ইতোমধ্যেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে৷ করোনা তিনবছর স্থায়িত্ব পেলে কয়লক্ষ সংক্রমিত হবে ও কয়লক্ষ প্রাণ দেবে বিশেষজ্ঞরা তার একটা পরিসংখ্যান দিতে পারে কি? স্বল্পসময়ের মধ্যেই মৃত্যুর মিছিল তিন হতে হাজার পেরোলো৷ তিনবছর স্থায়িত্ব পেলে কি হাজার হতে লক্ষ ও লক্ষ হতে কোটিতে যুক্ত হবেনা?মানুষ করোনা নিয়ে আর বিভ্রান্তি নয় পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগ চায়৷ চায় ভেকসিন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা৷ পৃথিবীর সকল স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের উচিত এ ইস্যুতে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন৷ আতঙ্কিত মানুষের মাঝে আতঙ্ক না ছড়িয়ে নির্ভরতা দেয়াটাই আজকের সময়ের দাবী।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)