করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাফল্যের বড় উদাহরণ হয়ে বিশ্বের সামনে এসেছিল জাপানের হোক্কাইডো শহরের নাম। সেখানে দ্রুততার সঙ্গে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত নাগরিকদের খুঁজে বের করা হয়। পাশাপাশি বেশি বেশি টেস্ট এবং করোনা পজিটিভদের আলাদা করে করোনা প্রতিরোধে সফল হয়। কিন্তু এরই মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় প্রবাহ বা ওয়েভের ধাক্কায় নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে শহরটি।
গত ফেব্রুয়ারির শেষে জাপানের মধ্যে হোক্কাইডো অঞ্চলে সবার আগে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে বড় ধরণের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ এবং নাগরিকদের বাসায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত কারো সংস্পর্শে আসা প্রত্যেক ব্যক্তিকে আলাদা করে ফেলতে সরকার জোর তৎপরতা চালায়।
এই পদ্ধতিতে ব্যাপক সফল্য পায় শহরটির কর্তৃপক্ষ। সে কারণে মধ্য মার্চে জরুরি অবস্থা তুলে নেয়া হয়। আর স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হয় এপ্রিলে। কিন্তু জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার মাত্র ২৬ দিনের মাথায় সরকার আবারও জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়। গত সপ্তাহেও হোক্কাইডোতে নতুন করে ১৩৫ জন কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া গেছে।
যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম যেভাবে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল, এবার তেমনটি নয়। কেননা এবার বিদেশ থেকে করোনা সংক্রমিত কোনো রোগী আসেনি। নতুন করে সংক্রমিত কোনো রোগী বিদেশি নাগরিক নন। এমনকি করোনাভাইরাস সংক্রমিতরা গত এক মাসে বিদেশও সফর করেননি। তাহলে নতুন এই সংক্রমণ কী বার্তা দেয়?
এই কৌশল অবলম্বন করে রোগের প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষমত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাউথ কোরিয়ার দাইগু শহরও একইভাবে সফল হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর দাইগু শহরে গণহারে টেস্ট করানো হয়। কিন্তু জাপান ঠিক উল্টা কাজ করে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার তিন মাস পার করেও জাপান করোনা টেস্ট করছে খুব অল্প সংখ্যক নাগরিককে। প্রাথমিক পর্যায়ে জাপান সরকার বলেছে, গণহারে টেস্টিং হবে সম্পদের অপচয়।
যদিও এমন অবস্থান থেকে জাপান সরকার পরে কিছুটা নমনীয় হয়। কিন্তু টেস্ট করার গতি বাড়েনি বিভিন্ন কারণে।
প্রথমত: জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আশঙ্কা, গণহারে টেস্ট করালে হাসপাতালগুলোতে রোগীর জায়গা হবে না। কিন্তু তাদের পর্যবেক্ষণ মতে বেশীরভাগেরই করোনা সংক্রমণের লক্ষণ প্রাথমিক পর্যায়ে।
দ্বিতীয়ত: জাপানের স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী করোনাভাইরাসের টেস্ট করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের, কেন্দ্রীয় সরকারের নয়। কিন্তু গণহারে টেস্ট করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের যথেষ্ট লোকবল নেই। স্থানীয় হটলাইনগুলো নাগরিকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের পরামর্শ দেয়ার মতো যথেষ্ট পরিমাণ ডাক্তার ছিল না।
এসব কারণে জাপান সরকার পরিস্কারভাবে ধরতে পারছে না, আসলে ভাইরাসটি জনগণের মধ্যে ঠিক কীভাবে সংক্রামণ ঘটাচ্ছে? অধ্যাপক শিবুয়া মনে করেন, মহামারির ঠিক মাঝ পর্যায়ে আছে জাপান।
হোক্কাইডো থেকে তিনি যে শিক্ষাটা নিতে বলছেন; তা হলো, প্রথম ধাক্কায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সফল হলেও দীর্ঘমেয়াদে নাগরিকদের বিচ্ছিন্ন রাখা খুব কঠিন। যদি না গণহারে টেস্ট করানো হয়।
হোক্কাইডোতে আবার নতুন করে সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হচ্ছে।যদিও জাপানে লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে বেশ নমনীয়। বেশীরভাগ মানুষ নিয়মিত কাজে যাচ্ছেন। স্কুল বন্ধ করা হলেও দোকানপাট এমনকি বারগুলোও খোলা থাকছে।
তবে জাপান সরকার তার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ সফরে এবং এশিয়ার বেশীরভাগ পর্যটন শহরে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছে।
হোক্কাইডোতে নতুন লকডাউন চলবে ৬ মে পর্যন্ত। তবে স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, এই নিষেধাজ্ঞা আরো লম্বা সময়ের জন্য বলবৎ থাকতে পারে।
কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা ঠিক কতদিন স্থায়ী হতে পারে? এই প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, হয়তো ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা পর্যন্ত চেষ্টা করতে হবে সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে নিয়ন্ত্রণে রাখতে।