সুবর্ণা মুস্তাফা। মুগ্ধতা ছড়ানো এক অভিনেত্রীর নাম। টানা কয়েক দশক ধরে টিভি নাটক ও সিনেমা অঙ্গন রাঙিয়ে চলেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতে আলো ছড়িয়েছেন মঞ্চেও। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) এই গুণী অভিনেত্রীর জন্মদিন! বিশেষ এই দিনে ছোট ও বড়পর্দার তারকা অভিনেতা, নির্মাতা থেকে শুরু করে শিল্প সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন ‘কোথাও কেউ নেই’ এর মুনা!
তার সাথে কাজের অভিজ্ঞতা, ব্যক্তি জীবন- কাজের সুবাধে এসব খুব নিবিড়ভাবে দেখেছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। সুবর্ণার জন্মদিনে তার কিছুটা তিনি ভাগ করেছেন ফেসবুক বন্ধুদের সাথে। যা হুবুহু চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
সুবর্ণা আপা,
কষ্টের সময় গুলোতে যিনি মায়া মমতা ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিলেন আমাকে, আমার পরিবারকে। তুমি কি জানো আজ তোমার কাজের ৫৩ বছর! তুমি ভাবতে পারো এখনো তুমি সদর্পে কাজ করছো এই প্রজন্মের সাথে? এবং তুমি আমাদের দেশের মাননীয় সাংসদ সদস্য! হুম আমরা ভাবতেই পারি, কারণ তুমি যোগ্য। অভিনন্দন তোমাকে। অনেক ভালোবাসা, শুভ কামনা।
আজ ২ ডিসেম্বর। আজকের এই দিনে পৃথিবীর বুক আলো করে এসেছিলেন আমাদের সবার প্রিয় অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। কিংবদন্তী এই অভিনেত্রী শক্তিমান অভিনয় শিল্পী গোলাম মুস্তাফা এবং রেডিও এর অনুষ্ঠান প্রযোজক ও লেখক হোসনে আরা মুস্তাফার কন্যা। প্রথমে অভিনন্দন জানাই এই গুণী অভিনয় শিল্পীর মাকে। কাকীকে অভিনন্দন মা হবার জন্য। তার অভিনয় দেখে বড় হয়েছি। সাদা কালো টিভিতে সেই ‘ইডিয়ট’ নাটক এখনও চোখের মনিতে লেগে আছে। তারপর থেকেই সাদা কালো রঙিন সহ অসংখ্য দারুণ দারুণ সব নাটক। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। এখনো দেখি।
আমাদের বাসায় তো তখন টেলিভিশন ছিল না। আর আমার মা খুব কড়া ছিলেন। কিন্তু তার নাটক দেখার জন্য সব পড়া শেষ করে আমাদের প্রতিবেশী মমতা কস্তা, হেলেন কস্তা, দিলীপ কস্তার বাসায় যেতাম। সারাদিন আবেগী হয়ে থাকতাম। আশির দশকে মা ‘ঘুড্ডি’ দেখাতে সিনেমা হলে নিয়ে গেলেন। মা জানতেন এই গুণী অভিনয় শিল্পীর কত্ত ভক্ত আমি! সেই তখন থেকে আমি তার ভক্ত। যার কথা শুনতে ইচ্ছা করে বার বার। যার কথা হা হয়ে শুনি এখনো।
তারপর কেটে গেলো অনেক দিন। সুশিক্ষিত রুচিশীল মানুষটি দিনে দিনে আমার মগজে ঢুকে গেলো। তার প্রতি আরো ভালো লাগা তৈরী হলো আমার সেইদিন, যেদিন তিনি এক কথায় জাতীয় পুরস্কার রিফিউজ করলেন! আহ! কী ব্যক্তিত্ব! আমি আরো তার প্রেমে পড়ে গেলাম! মনে হলো একজন নারীর ব্যক্তিত্ব এমনি হওয়া উচিত। শিখলাম। আমি জানি আমি অত মেধাবী পরিচালক নই। কিন্ত আমি পরিশ্রমী। আমি ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে কাজ করি।
একদিন প্রিয় মানুষ বিপাশাকে বললাম,‘২০০৭ সালে আমাকে একটা স্ক্রিপ্ট দিবে যা আমি সুবর্ণা আপা কে দিতে পারবো’! বিপাশা বললো,‘চয়ন আপা একটা স্ক্রিপ্ট আমার লাইন আপ করা আপনার ভালো লাগলে আমি লিখবো। আপনি ভালো বানাতে পারবেন’। বিপাশা আমাকে ‘ঘাসফুল’ লিখে দিলো। মুগ্ধ করা স্ক্রিপ্ট। দুরুদুরু বুকে কল দিয়ে তাকে স্ক্রিপ্ট পাঠালাম সকালেই। রাতেই তিনি আমাকে কল দিয়ে জানিয়ে শুটিং তারিখ দিলেন। অন্য কিছু ‘সো কল্ড স্টার’ শিল্পীদের মত দেরী হলো না। নাটকটি আরটিভি তে ঈদে গিয়েছিল। আমি বেস্ট ডিরেক্টর হিসাবে সিজেএফবি পুরস্কার পেয়েছিলাম। তারপর ২০১১ সালে করা হলো আরেকটি টেলিফিল্ম অরুণ চৌধুরীর লেখা ‘আকাশ জোড়া মেঘ’। তার সাথে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি এবং বুঝেছি আসলেই ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’।
২০১৭, ২০১৮তে তাকে নিয়ে তার সাথে অনেক অনেক ভালো কিছু কাজ করেছি। ১০/১২ টা কাজ। কাছে গিয়েছি,মুগ্ধ হয়েছি। এতো কেয়ারিং একজন মানুষ! নিজ হাতে তার বাসায় সব কিছু করে। সবার খেয়াল রাখে। মনের ভিতর অনেক মায়া। এই গুণের কথা অনেকে জানেন না। সুবর্ণা আপা, তোমাকে নিয়ে লেখার মত কোন যোগ্যতা বা সাহস আমার নেই। আজ তোমার জন্মদিন। তাই লোভ সামলাতে পারলাম না। তুমি অনেক ভালো থেকো, সুস্থ সুন্দর থেকো। আর এমন করে আমাকে ভালোবেসো। অনন্ত শুভ কামনা আর ভালোবাসা।
তোমাকে অনেক দিন বাঁচতে হবে এই পৃথিবীতে অভিভাবক হয়ে। চারিদিকে অনেক অস্থির সময়! ‘সদা থাকো আনন্দে, সংশয়ে, নির্ভয়ে…’। যা আমাদের সব সময় বলা হয় না, তা বার বার বলতে চাই, লিখতে চাই। সুবর্ণা আপা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। সম্মান করি।
লেখক: চয়নিকা চৌধুরী, নির্মাতা