বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ও এর লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বাস্তবায়ন কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উপাত্ত ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগ ও ইউএনডিপি’র সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল এন্ড ইনক্লুসিভ প্ল্যানিং (এসএসআইপি) এর যৌথভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে “টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে উপাত্ত ঘাটতি বিশ্লেষণ: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত”, “ব্যাংকিং অ্যাটলাস” ও “হাওরাঞ্চলের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন” শীর্ষক তিনটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ।
জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন সূচকের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ উপাত্ত বর্তমানে বাংলাদেশের রয়েছে এবং অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ উপাত্ত আংশিকভাবে বিদ্যমান অথবা অনুপস্থিত বলে বলা হচ্ছে এই গবেষণায়।।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর জনাব সুদীপ্ত মুখার্জি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত বাংলাদেশ। সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ যেমন সফলতা অর্জন করেছে তেমনি এসডিজি বাস্তবায়নেও একইভাবে সফলতা অর্জন করবে। তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় অগ্রগামী দেশ বাংলাদেশ। লক্ষ্য অর্জনে আমরা ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে এসডিজি লক্ষ্যগুলো একীভূত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসডিজি চাহিদা নিরূপণ এবং অর্থায়নের কৌশল, এসডিজি পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন কাঠামো অতি দ্রুতই প্রণয়ন করা হবে।
উপাত্ত ঘাটতি সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, তথ্য আমাদের আছে, কিন্ত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), লক্ষ্যমাত্রা ও এর সূচকসমূহে নতুন অনেক বিভাজিত উপাত্ত চাওয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করার জন্য বলেছি এবং অতি দ্রুতই আংশিকভাবে বিদ্যমান এবং যেসব তথ্য একেবারেই নেই সেগুলোও পাব।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনসমূহের ফলাফল উপস্থাপন করে ড. শামসুল আলম বলেন, এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত এই উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা এখন জানতে পেরেছি, আমাদের কী ধরনের উপাত্ত আছে এবং সূচকের বিপরীতে আরো কী ধরনের উপাত্ত প্রয়োজন।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে উপাত্ত ঘাটতি বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট উপাত্তের ২৯ ভাগ পাওয়া গেছে, ৪৫ ভাগ উপাত্ত আংশিকভাবে বিদ্যমান যেগুলোর সংযোজন এবং পরিমার্জন প্রয়োজন। বাকি ২৬ ভাগ উপাত্ত একেবারেই নেই।
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না আর এটাই হচ্ছে এসডিজির মূল প্রতিশ্রুতি। কেবল পর্যাপ্ত বিভাজিত উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমেই জানা যাবে কারা পেছনে পড়ে আছে। হাওর অঞ্চলের উন্নয়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহনের মাধ্যমে সকলকে সম্পৃক্ত করে হাওর অঞ্চলের মানুষদের জীবন জীবিকার উন্নয়নে সবাইকে কাজ করতে হবে। সম্পদ-সমৃদ্ধ এই হাওর যেন এই অঞ্চলের মানুষের জন্য-অভিশাপে পরিণত না হয় সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে।
ব্যাংকিং অ্যাটলাস প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে যা অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমে ব্যাপক উন্নতির বার্তা বহন করে ।
“হাওর অঞ্চলের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নীতিমালা ঘাটতি বিশ্লেষণ” শীর্ষক প্রতিবেদনে হাওর এলাকার উন্নয়নে সরকারি সংস্থাসমূহের কাজের মধ্যে সুসমন্বয় ও বেসরকারি খাতের উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
তবে এসডিজির ১৭টি বৈশ্বিক অভীষ্টের অধীনে ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রগতি কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করা হবে ২৩০টি সূচকের মাধ্যমে। বাংলাদেশে অবশ্য ২৪০টি সূচক দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে।যার মধ্যে (সাতটি সূচক দুবার এবং দুটি সূচক তিনবার করে এসেছে)। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে এখন বর্তমানে ৭০টি সূচকের উপাত্ত বিদ্যমান রয়েছে, ১০৮টি সূচকের উপাত্ত আংশিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে এবং অবশিষ্ট ৬৩টি সূচকের উপাত্ত একেবারেই নেই
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম এর সভাপতিতে অনুষ্ঠিত এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) এর অধ্যাপক সৈয়দ মুনির খসরু, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধূরী এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হামিদুল হক। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এর প্রধান ও এসএসআইপি প্রকল্প পরিচালক জনাব নকিব বিন মাহবুব অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।