কবরী নির্মিত ও অভিনীত শেষ ছবি ‘এই তুমি সেই তুমি’। চলমান করোনাকালের ফাঁকে ফাঁকে শেষ করেছেন এর শুটিং। বাকি ছিলো সম্পাদনা ও ডাবিং এর কাজ। সেটির কাজও তিনি একটু একটু করে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ আর করা হলো না। তার আগেই তিনি বিদায় নিলেন!
শেষ ছবিতে কবরীর মেয়ে চরিত্রে অভিনয় করেন নবাগতা নিশাত নাওয়ার সালওয়া। গত ২৪ মার্চ বরেণ্য এই অভিনেত্রীর সঙ্গে ডাবিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। আর ৫ এপ্রিল সর্বশেষ ফোনে কথা হয় দুজনের। যা এখন শুধুই স্মৃতি!
সালওয়া জানালেন এই কিংবদন্তীর সঙ্গে কাজ করার নানা অভিজ্ঞতার কথা।
সালওয়ার ভাষ্য, ‘২৪ মার্চ আপার সঙ্গেই সারাদিন ছিলাম। এদিন আমাদের ছবির ডাবিং হয়। আমার অংশের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছিল। আমি বলব, আমার জন্য বড় একটি অভিজ্ঞতা হলো এই ছবি।’
শুধু অভিজ্ঞতাই নয়, কবরীর নায়িকা হওয়াটা তার জন্য বড় প্রাপ্তি হিসেবে মনে করেন। ‘কবরী আপার ছবিতে নায়িকা হওয়াটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। অনেক সময় পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, অমুক নায়কের নায়িকা। কিন্তু আমাকে সবাই বলেন, তিনি কবরীর নায়িকা। এটার চেয়ে তো বড় আর কিছু নেই। এক বছরের বেশি আমি উনার সংস্পর্শ পেয়েছি। অবশ্যই আমি ভাগ্যবতী।’ বললেন সালওয়া।
কাজ করতে গিয়ে কবরী পরিবারের সদস্য হয়ে গিয়েছিলেন সালওয়া। সন্তানের মতোই তাকে দেখতেন কবরী। বিষয়টি নিয়ে সালওয়া বলেন, ‘একটা সন্তানের সঙ্গে মা কী করেন? বকা দেন, রাগ করেন আবার আদর করেন। উনি তা-ই করতেন। প্রথম প্রথম আমার মন খারাপ হতো। পরে বুঝলাম, আরে না, তিনি তো আমার ভালো চান বলেই এভাবে বলেন। আমি বলব, উনি অভিমানী ছিলেন। মানুষ যার ওপর অধিকার রাখে তার সঙ্গেই রাগ করেন। তিনি চাইতেন, আমার অভিনয় যেন পারফেক্ট হয়- তাই বকা দিতেন। আর ঘরোয়া কবরী খুবই সিম্পল। তার বাসায় গেলে বোঝাই যেত না, উনি এত বড় অভিনেত্রী।’
কবরীর সঙ্গে সর্বশেষ কথা প্রসঙ্গে সালওয়া বলেন, “কিছুদিন আগে চাঁদপুরে ‘বুবুজান’ চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কবরী আপা নিজেই ফোন দিতেন। খোঁজ খবর নিতেন। গত ৫ এপ্রিল ফোন দিয়েছিলেন। মজা করে বললেন, ‘এখন তো তুমি ব্যস্ত, তোমার সিডিউল পাওয়া কঠিন! এখন তো বাসায় আসবে না!’ আমি বললাম, ‘আপা কাজ নিয়ে একটু ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি শিগগিরই আসবো।’ চট করে কবরী আপা বললেন, ‘এখন আসার দরকার নাই। আমার শরীর খারাপ, জ্বর। সুস্থ হই, তারপর এসো।’ সেই জ্বরটাই কাল হলো। আপা আর সুস্থ হলেন না।”
সালওয়া জানালেন, তাদের ছবির শুটিং পুরোপুরি শেষ। পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ হলেই ছবিটি মুক্তি পেত। কবরী মুক্তির জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে গত শুক্রবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবরী।