Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

এইচএসসি এবং বিসিএসের ফল প্রকাশের পর

বিসিএস এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ছেলেমেয়েদের উদ্দেশে বিভিন্ন উপদেশ ও পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। এসব পরীক্ষার ফলাফলে যারা ভাল করেছেন বা যারা ভাল করতে পারেননি উভয়পক্ষের জন্যেই পরামর্শ রেখেছেন তারা।

গত বুধবার ৩৫তম বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ফল প্রকাশিত হয়। এতে মোট পাঁচ হাজার ৫৩৩ জন
উত্তীর্ণ হয়েছেন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ২ হাজার ১৫৮ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

আর বৃহস্পতিবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ১০ শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ৭৪.৭০ শতাংশ, যা গত বারের চেয়ে ৫.১০ শতাংশ বেশি।

কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় ষোলো আনা ফল পেয়েছে শুনে পবনবাহন যোগে সাধুবাদ পাঠাচ্ছি। আশা করি হস্তগত হবে। তবু এ কথাটা মনে করিয়ে দেওয়া ভাল যে, পরীক্ষার ফল যে খুব বেশি দামি এ কথা আমি কোনদিন মনে করিনে, বাল্যকালেই তার পরিচয় দিয়েছি– বৃদ্ধকালেও যে মতের পরিবর্তন হয়েছে তার লক্ষণ দেখিনে। — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আনিসুল হক আরো বলেন, ভালো রেজাল্ট হলে ভালো ডাক্তার হবেন, খারাপ রেজাল্ট হলে হাসপাতালের মালিক হবেন, ভালো রেজাল্ট হলে ইঞ্জিনিয়ার হবেন, খারাপ রেজাল্ট হলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক হবেন, ভালো রেজাল্ট হলে অধ্যাপক হয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় তরী শব্দের ব্যবহার নিয়ে থিসিস লিখবেন, খারাপ রেজাল্ট হলে রবীন্দ্রনাথ হবেন, ভালো রেজাল্ট হলে সচিব হবেন, খারাপ রেজাল্ট হলে মন্ত্রী হবেন। ভালো রেজাল্টেও মন্ত্রী হয় কিন্তু …

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মাহবুবুল হক শাকিল ফেসবু স্ট্যাটাসে বলেন,  ৩৫ তম বিসিএসে যারা সুযোগ পেয়েছো তাদের অভিনন্দন। আশা রাখি, প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসাবে “সিভিল সার্ভেন্ট” শব্দটির আক্ষরিক অর্থ মনে রেখে তারা কাজ করবে সততা, কর্মনিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সাথে।

যারা সুযোগ পাওনি তাদের জন্যই মূলত আমার এই লেখা।

তামাদি হয়ে গেছো অকৃতকার্য হয়ে? বাবা-মা, পরিবারের সবার কাছে নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে? বড়োই অপাংক্তেয় লাগছে বন্ধুদের আড্ডায়? প্রাণের চেয়ে প্রিয় সেই মেয়েটি ফোন ধরেনি?

না। তুমি শেষ হয়ে যাওনি। এখনো ফুরিয়ে যাওনি। তোমার চোখে আছে স্বপ্ন, রক্তে নাচে আকাঙ্খা। শেষ হয়োনা। এখনতো কেবলি শুরু।

তিনি আরো বলেন,  আমাদের অনেক বন্ধুরা যারা ক্লাশের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন তারা এখন হাজার লোকের কর্মসংস্থানের জোগানদার, সফল শিল্পপতি।

আমার সাথের বন্ধুরা যারা বিসিএস দিয়েছিলেন তারা এখন সরকারের উচ্চপদে, যাদের নিয়ে সত্যিই গর্ব করি। আমি এখনো পা বাড়াই অনিশ্চয়তার পথে, জীবন সাজাই ইচ্ছের খাতায়।

নির্মলেন্দু গুণ কি বিসিএস দিয়েছিলেন? অথবা রসায়নের মেধাবী ছাত্র হুমায়ূন আহমেদ?

একবার আয়নায় দেখো তোমার সাহসী মুখচ্ছবি। পৃথিবীর ইতিহাস পাল্টে দিতে পারে শুধু অকৃতকার্যরাই। আমিওতো লাষ্টবেঞ্চ, তোমাদেরি দলে।

সাংবাদিক রুহুল মাহফুজ জয় বলেন, জিপিএ’র অভিশপ্ত প্রথম ব্যাচের ছাত্র আমি। উচ্চমাধ্যমিকে গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ ছিল মাত্র ৩.৮০ (তখন চতুর্থ বিষয় যোগ হতো না)। আমাদের উপজেলায় সবগুলো কলেজের মধ্যে আর্টস থেকে এটাই ছিল সর্বোচ্চ জিপিএ। সারাদেশে মানবিকে জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল মাত্র একজন। ৩.৫০ থেকে ৪.৮০ পেয়েছিল মাত্র চার হাজার। মফস্বল থেকে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ৯৮তম হয়েছিলাম। শহরের নামী-দামী কলেজ থেকে পাস করা, জিপিএতে আমার চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকারা ভর্তি পরীক্ষায় আমার চেয়ে পিছিয়ে ছিল।

আমার পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয়েছিল খবরের কাগজের হেডলাইন পড়ে পড়ে। কখনোই নম্বর বেশি পাবার জন্য পড়াশোনা করিনি। প্রতিদিন খবরের কাগজ, সাহিত্য-সাময়িকী, নানা রকমের ম্যাগাজিন বা আউট বই পড়তাম। অনেক পড়তাম। বাবার বইয়ের ব্যবসা আমার জন্য ছিল আশীর্বাদ। শেখার জন্য পড়তাম। আনন্দ পেতে পড়তাম। গা্ইড বইয়ে প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ না করে উপন্যাস-গল্প পড়ার মতো করে টেক্সট বই পড়তাম। যে অভ্যাসটা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় কাজে দিয়েছে। সাধারণ জ্ঞানে ৬০ এ পেয়েছিলাম ৫৮.৮।

তাই বলি, জিপিএ ফাইভ না পাওয়া নিয়ে কোন দুঃখ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য আনন্দ নিয়ে পড়ুন। অন্য কাউকে না, নিজেকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবুন। ভবিষ্যতে দেখবেন, আপনার চেয়ে অনেক ভাল গ্রেড পয়েন্ট নিয়ে পাস করাদের চেয়ে সব জায়গাতেই আপনি অনেক অনেক এগিয়ে।

Exit mobile version