ঋত্বিকদা তখন বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজছিলেন: কুমার সাহানি
‘কলকাতায় ঋত্বিকদা কিছুটা অসুবিধার মধ্যে পড়ছিলেন। তিনি সারভাইভ করার জন্য একটা অবলম্বন খুঁজছিলেন তখন। আর তখন ইন্দিরা গান্ধী এই বিষয়টা জানতে পেরেছিলেন’
‘আমার জীবনে যে সামান্য কয়েকটি ছবি করেছি সেগুলো যদি পাল্লার একদিকে রাখা হয়, আর মাস্টারি যদি আরেক দিকে রাখা হয় তবে মাস্টারিটাই ওজনে অনেক বেশি হবে। কারণ কাশ্মীর থেকে কেরালা, মাদ্রাজ থেকে আসাম পর্যন্ত সর্বত্র আমার ছাত্র-ছাত্রীরা আজকে ছড়িয়ে গেছে। তাদের জন্য আমি যে সামান্য অবদান রাখতে পেরেছি সেটা আমার নিজের সিনেমা বানানোর থেকেও বেশী গুরুপ্তপূর্ণ!’-এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই বলছিলেন নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক। তাঁর কথা কতোটা সুদূরপ্রসারি ছিলো, তার প্রমাণ পাওয়া যাবে তার হাতে গড়া ছাত্রদের দিকে তাকলেই!
শিক্ষক হিসেবে পুনের এফটিআইআই (ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া)-এ যখন যোগ দিয়েছিলেন ঋত্বিক ঘটক, তখন ছাত্র হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন মণি কাউল, কুমার সাহানি এবং কে কে মহাজনদের। যারা পরবর্তীতে ভারতীয় সিনেমায় একেকজন দিকপাল! এরমধ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন নির্মাতা কুমার সাহানি। যিনি মায়া দর্পণ, চার অধ্যায়ের মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ১৫তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব উপলক্ষ্যে ঢাকায় অবস্থান করছেন তিনি। গেল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) চ্যানেল আই অনলাইনের মুখোমুখি হন এই নির্মাতা। আলাপের বেশির ভাগ অংশ জুড়েই ফিরে ফিরে এসেছেন ঋত্বিক ঘটক…
প্রথমেই চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক হিসেবে ঋত্বিক ঘটকের সাথে আপনার প্রথম দেখা বা পরিচয়ের সেই অভিজ্ঞতা জানতে চাই…?
ঋত্বিক ঘটক মানুষ হিসেবে দারুণ মানুষ ছিলেনতো বটেই, এমনকি উনি শিক্ষক হিসেবেও দারুণ ছিলেন। আমি ঋত্বিকদাকে চিনতাম এফটিআইআই(ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া)-এ যাওয়ার আগেই। সেসময় ‘সুবর্ণরেখা’ চলচ্চিত্রকে কলকাতার মানুষ রিফিউজ করে দিয়েছে, তো আমরা মুম্বাইতে এই চলচ্চিত্রের ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব নিলাম। আমি তখন ফিল্ম সোসাইটির ফাউন্ডার, তরুণ একজন চলচ্চিত্র সংসদকর্মী। মাত্র কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি মাত্র। ভাবতেই পারছিলাম না এরকম দারুণ একটা কাজ বিশ্বের কোথাও হয়েছে আর সেটা ইন্ডিয়াতেই! এরপর থেকে আমি নিজেই পথ চলা থামাতে চাইনি আর। চলতেই শুরু করলাম। এটার একটা বিরাট প্রভাব ছিল আমার উপর। ঋত্বিকদা এফটিআিআই-তে জয়েন করার আগেই আমি ভর্তি হয়েছিলাম। আমার জন্য এটা বিশাল এক সারপ্রাইজ ছিল যখন তিনি জয়েন করলেন। প্রথম যখন ঋত্বিকদা ইন্সস্টিটিউটে (ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া) এলেন আমি এর আগে থেকেই তাঁর কাজ সম্পর্কে জানি, তাঁকে চিনি। আমি জানতাম, তিনিই যথার্থ একজন এই পোস্টের জন্য। ঋত্বিকদা ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এবং আপনি জানেন তখন দুই জন ভাইস চেয়ার পারসন ছিলেন, একজন ঋত্বিকদা, আরেকজন কে জানেন?
কে ছিলেন?
- ইন্দিরা গান্ধী। এটা একটা বড় কারণ ছিল কলকাতায় ঋত্বিকদা কিছুটা অসুবিধার মধ্যে পড়ছিলেন সেসময় এবং অবশ্যই তাঁর জীবনটা খুব জটিল হয়ে যাচ্ছিলো। তিনি…! তিনি সারভাইভ করার জন্য একটা অবলম্বন খুঁজছিলেন তখন। আর তখন ইন্দিরা গান্ধী এই বিষয়টা জানতে পেরেছিলেন। সেসময় টেলেন্টেড এবং যোগ্য একজন খোঁজা হচ্ছিলো ইন্সস্টিউটে যিনি আগামী প্রজন্মকে ফিল্ম সম্পর্কে জানতে বুঝতে আগ্রহী করে তুলবে। ঠিক যেরকমটা ঋত্বিকদা ছিলেন, নিঃসন্দেহে। আমার জন্য শিক্ষার্থী হিসেবে এটা দারুণ স্বস্তির ছিল যে তিনি ইনস্টিটিউটে এলেন। কারণ ইতোমধ্যেই আমি একাডেমিক পরিবেশে এক ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। বোম্বে (মুম্বাই)-তে যারা উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী ছিল তাদেরও দেখতাম ইন্ড্রাসিতে কাজের জন্য বা কাজ খুঁজতে ঘুরছে। যেটা কমার্শিয়াল একটা এপ্রোচ যা একাডেমিক এপ্রোচের চেয়ে ভিন্ন। যেটার মূল মানেটা হচ্ছে তারা উচ্চশিক্ষায় বেশি আগ্রহী ছিল না। এমনকি শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষকও বা ভাইস চ্যান্সেলর হয়ে যাচ্ছিলেন এমনও অনেকে ছিলেন যাদের উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে বা পড়াশোনার বিষয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না। ঠিক একইভাবে ফিল্ম ইনস্টিটিউটেও এরকম উদাহরণ দেখা যাচ্ছিলো। তিন চার বছর ধরে যে ব্যাচগুলো দেখছিলাম এর শিক্ষার্থীরা অধিকাংশই উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে তেমন আগ্রহী ছিল না বরং ক্যারিয়ারের চিন্তা তাদের বেশি ছিল। সেই সময় ঋত্বিকদা ভাইস প্রিন্সিপ্যাল হিসেবে জয়েন করলেন। এখন সেই পোস্টও নেই। এখন ইনসস্টিউটে ডিরেক্টর পোস্ট আছে, এরপর ডিন। আমার মনে আছে, তিনি আসার পরপরই ফিল্ম সুপারভাইজ করতে শুরু করেছিলেন।
আপনি, মণি কাউল এবং জন, ঋত্বিক ঘটক-এর প্রিয় ছাত্র ছিলেন, বিভিন্ন সময় তিনি এ কথা বলেছেন। আপনাদের সেই সার্কেল এবং ঋত্বিক ঘটক-এর সাথে আপনাদের চলচ্চিত্র বিষয়ক বোঝাপড়া কেমন ছিল ?
- জন আসলে পরে এসেছিল। জন, মণি এবং আমার চেয়ে বয়সে বড় কিন্তু ইনস্টিটিউটে পরে ভর্তি হয়েছিল। তাই ঋত্বিকদা থাকার সময় জন ইনস্টিটিউটে ছিল না।
ঋত্বিক ঘটক যখন এফটিআইআই (ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া) ছেড়ে যেতে বাধ্য হোন তখন একটা পলিটিক্যাল ক্রাইসিসের কথা শোনা যায়। আসলে কী ঘটেছিল বা পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
- আসলে, হ্যাঁ অবশ্যই কিছু পলিটিক্যাল ক্রাইসিস তো ছিলই। কিন্তু এছাড়াও মূল যে ব্যাপারটা তা হল একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছিল। সেসময় আমি সেখানে ছিলাম না, কিছুদিনের জন্য বোম্বে-তে গিয়েছিলাম। উনারা শুটিংয়ে গিয়েছিলেন রোনাভলা বা কার্লা কেভস এর দিকে। স্টুডেন্ট প্রজেক্টের শুটিং চলছিল তখন। সেখানেই কোন একটা সমস্যা হয়েছিল, আমি বিস্তারিত জানি না, বিস্তারিত জানতেও চাই না। কেননা এরপর সমস্তটা গুলিয়ে গেল, আমি ছিলামও না সেখানটায়। আমার যতদূর মনে পড়ে মনি (মনি কাউল) ছিল সেখানে।
‘মায়া দর্পণ’ ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। আজ এতো বছর পর এসে ‘মায়া দর্পণ’ সম্পর্কে আপনার নিজের কী মনে হয়?
- নিজের চলচ্চিত্র সম্পর্কে নিজা বলা! এটা কঠিন আমার জন্য। তবে আমার মনে হয় এটা গভীর একটা প্যাশনের জায়গা থেকে নির্মিত। সম্প্রতি আমি চলচ্চিত্রটি আবার দেখলাম কারণ চায়নার পিং ইয়াও চলচ্চিত্র উৎসব চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের আয়োজন করেছিল। প্রিন্ট এপ্রোভড করার জন্য দেখা হল চলচ্চিত্রটি আবার। আমার মনে হয়, ‘মায়া দর্পণ’ এমন একটা চলচ্চিত্র যেটা কেউই প্রথম দর্শনে পছন্দ করে না এবং আমি জানি সেটা কেন! এমনকি এখন পর্যন্ত এই চলচ্চিত্রটা অনেকটা সিম্পল দৃষ্টিকোণ থেকেই পর্যালোচনা করা হয়েছে। আমি মানুষকে এমনও বলতে শুনেছি, এটাতে কী আছে? কয়েক মাস আগে সত্যজিৎ রায় মেমোরিয়াল লেকচার-এ শেষে জ্যোতিমান, যিনি নিজেও দারুণ একজন অভিনেতা, বলছিলেন যে, প্রথমবার কুমার সাহানি-র চলচ্চিত্র দেখার সময় কিংবা কুমার সাহানির কোন বক্তব্য শোনার সময় অধিকাংশই বুঝতে পারেন না এটা আদতে কী বিষয়ে, আদৌ কি কোন নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু এতে আছে। এই আর কী !
প্রথম ‘মায়া দর্পণ’ এর কাহিনি বা চিত্রনাট্য কবে থেকে ভাবছিলেন? বা এর পেছনের গল্পটা কী ?
- আমি অনেকগুলো চিত্রনাট্য লিখেছিলাম। কিন্তু সবগুলোই আমি বাতিল করে দিলাম নিজে থেকেই। সবেমাত্র ফিরেছি তখন ফ্রান্স থেকে। এরপর আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম যে আমি ফ্রান্সে কী মিস করেছি যার উপর দাঁড়িয়ে একটা ফাউন্ডেশন দাঁড় করানো যেতে পারে চিত্রনাট্যের? আমার তখন মনে হল আমি সবচে বেশি মিস করেছি এনার্জি আর রঙ! এবং এখানকার শব্দের এই শক্তিটাও। আরেকটা জিনিস দারুণভাবে মিস করেছিলাম সেটা হচ্ছে চিন্তার মান যেটা মুভমেন্টকে অন্তর্ভুক্ত করে। ফ্রেঞ্জ ভাষায় যাকে বলে ‘Cartesian’ (কার্টেজান)। আরেকটা জিনিস হচ্ছে ইউরোপিয়ান সোসাইটি যা যা চর্চা করছিল তা থেকে দূরে সরে যাওয়া কঠিন ছিল। এমনকি ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জীবনেও। তবে শিল্পে মানুষ সে চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। তো আমি এসমস্ত বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম, সেকারণেই ‘মায়া দর্পণ’কে বেছে নেওয়া।
আপনার চলচ্চিত্রে মিনিমালিস্টিক এপ্রোচ সম্পর্কে কী মনে হয় আপনার? যেহেতু আপনি রবার্ট ব্রেঁসো এবং ঋত্বিক ঘটক দু’জনের সান্নিধ্যেই ছিলেন, এই এপ্রোচের পেছনে কোন সময়টাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় বেশি?
- আমার ডিপ্লোমা ফিল্ম যেটা ঋত্বিকদার সাথে পরিচয়ের পর নির্মিত সেটা লক্ষ্য করলেও দেখা যায় সেখানেও এ এপ্রোচ ছিল। প্রথম যে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটা আমি ঋত্বিকদার কাছে শিখেছিলাম সেটা হল, কীভাবে সাউন্ড ট্র্যাক ইমেজের ডিসকোর্সকে বা ভিজ্যুয়ালকে অন্য একটা ডায়ামেনশনে পৌঁছে দিতে পারে। আমার একটা সন্ধ্যার কথা খুব মনে পড়ে, ফিল্ম ইন্সস্টিটিউটে (এফটিআইআই) একটা ঢাল আছে, সেখানে উনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে পুরনো প্রভাত স্টুডিওটা। তো আমি উনার কাছে হেঁটে গেলাম, উনি বললেন – ‘কুমার তুমি সাউন্ড থিয়েটারে এসো তো। ম্যাজিকাল একটা জিনিস দেখাবো তোমাকে।’ আমি জিজ্ঞেস করছিলাম – ‘কী? কী জিনিস ঋত্বিকদা?’ ঋত্বিকদা উত্তর দিলেন – ‘আসো, এসে নিজে দেখে যাও।’ সেটাই আমার প্রথম সাউন্ড মিক্সিং সেশন ছিল উনার সাথে। এটা একটা বিপ্লবের মতোন ব্যাপার। সেসময় যে চলচ্চিত্রের সাউন্ডের কাজ চলছিল, এতো যত্ন নিয়ে প্রতিটা শব্দ সংযোজনের ব্যাপার দেখছিলেন তিনি, দারুণ একজন সাউন্ড রেকর্ডিস্ট কাজ করেছিলেন সে প্রজেক্টে। আমি যখন সে সেশনে গেলাম, শব্দের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গিই পাল্টে গেল। তখনই আমি ভেবেছিলাম, মিনিমাল ভিজ্যুয়াল ইমেজের প্রতিই আমি যত্নবান হবো যখন আমি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবো। মাল্টি ডায়ামেনশনাল ওয়েতে শব্দকে ব্যবহারের চিন্তাও তখন থেকেই ভাবনায় গেঁথে যায়।
চলচ্চিত্র নির্মাতা রবার্ট ব্রেঁসোর সাথে কাটানো আপনার দারুণ একটা মুহূর্তের কথা জানতে চাই?
- রবার্ট ব্রেঁসোর সাথে আমার দারুণ একটা মুহূর্তের কথা মনে পড়ে, আমি অনেকটা দূরে থাকতাম যেখানে আমাদের শুটিং হতো সে জায়গা থেকে। তো তিনি প্রতিদিনই প্রায় আমাকে নিজে ড্রাইভ করে দিয়ে আসতেন, দারুণ মানুষ ছিলেন তিনি। এতো ভালোবাসা পেয়েছিলাম উনার, আমি খুবই কৃতজ্ঞ তাঁর প্রতি।
রবার্ট ব্রেঁসো এবং ঋত্বিক ঘটকের চিন্তা ভাবনার মধ্যে মূল পার্থক্যের জায়গাটা কী বলে মনে হয় আপনার?
- তাঁদের দু’জনের মধ্যে মূল পার্থক্যের জায়গাটা আমি বলবো – থিয়েট্রিক্যাল এপ্রোচের জায়গাটা। এই পার্থক্যের জায়গাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সিনেমা থিয়েটার থেকে বের হয়ে এসে নেটফ্লিক্স বা বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে এখন চলে এসেছে ব্যাপকভাবে। অনেকক্ষেত্রে অনেকে এটাকে গ্রহণ করতে পারছেন না আবার অনেকে খুবই ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন। তো এই সময়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
- আসলে, এটা একটু জটিল একটা সমস্যাও। মূল ব্যাপারটা হল, যাই আপনি দেখছেন ডিজিটালি তার একটা নির্দিষ্ট মুড আছে। এই নির্দিষ্ট মুড কিন্তু সিনেমার ভাষাগত দক্ষতার ঘাটতির জন্যও দায়ী। কিন্তু সেটা কী আসলে এই ডিজিটাল সিগন্যালেরই জন্য নাকি যারা এটা প্রোডিউস করছে তাদের জন্য ঘটছে এটা একটা প্রশ্ন বটে। দেখুন আমার মা-বাবা আমাকে যেভাবে বড় করেছেন সেটা একটা ধরন ছিল, তাঁরা আজ আর বেঁচে নেই। তারপর আমি আমার সন্তানদের বড় করলাম, সেটাও তো ভিন্ন এক ধরনেই বড় করা। তো কেন মানুষ ভিন্ন ভিন্নভাবে রিয়েক্ট করে, কেন ভাষার কিছু দিক হারিয়ে যায় বা থেকে যায়- কোন একটা নির্দিষ্ট কারণের জন্যই এটা হচ্ছে সেরকমটা বলা যায় না। একটা জেনারেশনেই এই পরিবর্তনের প্রভাব বোঝা সম্ভব নয়। প্রতিটি মুহূর্তেই তো পরিবর্তন হচ্ছে, আমাদের দেহের কোষেরও কিন্তু পরিবর্তন হয় প্রতি মুহূর্তে কোন একটা রঙের জন্য, কোন শব্দের জন্য। এই যে আপনার সাথে কথা বলছি, ভিন্ন ভিন্ন শব্দে আমার ভেতর কী ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি কাজ করছে না? তো কীভাবে কখন কী জন্য কোন পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে বা ঘটছে তা আমরা কেউ ই যথার্থভাবে জানি না। যা-ই আমি বলি বা আপনি বলেন সেটা আদতে একটা অপেনিয়ন ছাড়া আর কিছুই নয়।
ছবি: মাঈন মজুমদার