সন্দ্বীপের প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো। গ্রামীণ সড়ক এখন হয়েছে পিচঢালা। কাঁচা বা মাটির ঘর এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
অধিকাংশ বাড়ি পাকা ও আধাপাকা। শহরের মতোই রাতের অন্ধকার দূর করতে গ্রামের রাস্তার মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে সোলার লাইট, বিনা টাকায় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে খুলতে পারছে এজেন্ট ব্যাংক একাউন্ট, ইন্টারনেট, স্যাটালাইট টেলিভিশন চ্যানেলসহ তথ্য প্রযুক্তির সকল সেবা পাওয়া যাচ্ছে গ্রামে বসেই।
শহরের আধুনিকতার সঙ্গে তাল মেলাতে শুরু করেছে সন্দ্বীপের প্রতিটি গ্রাম। শহরের সুবিধা পৌঁছে এখন পাওয়া যাচ্ছে যাচ্ছে এই দ্বীপে। বদলে গেছে সন্দ্বীপের জীবন মান। পুরুষদের পাশাপাশি স্বাবলম্বী এখন সন্দ্বীপের নারীও।
এতে সংসারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন হচ্ছে তেমনিভাবে পাল্টে যাচ্ছে সন্দ্বীপের অর্থনীতি। করোনার কারণে স্বাভাবিক জীবনে কিছুটা স্থবিরতা আসলেও আবারও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সবকিছু।
৭৬২.৪২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সন্দ্বীপ উপজেলার জনসংখ্যা ৪ লাখ। একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় গ্রামের সংখ্যা রয়েছে ৩৪টি।
অন্ধকারে সন্দ্বীপ, অথবা অবহেলিত শব্দটি আর থাকছে না। পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে সবকিছুই।
পালাবদল ঘটেছে দ্বীপের অবকাঠামোতে, খাদ্যের প্রাপ্যতায়, জীবনযাত্রার মানে, যোগাযোগ ব্যবস্থায়, শিক্ষায় ও স্বাস্থ্যে। কুঁড়েঘরের জায়গায় এসেছে টিনের ঘর। শুধু কৃষিকাজ নয়,সন্দ্বীপের মানুষ এখন বহু ধরনের পেশায় নিজেদের যুক্ত করে জীবন বদলে নিচ্ছে।
বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি নানামুখী কর্মে নিয়োজিত এলাকার নারীরাও। এসব গ্রামের উৎপাদিত নানা পণ্য নিয়ে সহজেই যাতায়াত করছেন। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন গতি এসেছে তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নও হচ্ছে। দারিদ্র্য জয় করে সন্দ্বীপের প্রতিটি পরিবার এখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখেন।
অথচ কয়েক বছর আগেও সন্দ্বীপে কাঁচা রাস্তার কারণে এলাকার মানুষ বেকার সময় কাটাতেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে হাঁটুসমান কাদায় পরিণত হতো রাস্তা গুলো। এখন এলাকার প্রতিটি মানুষের আয় বেড়েছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থাও বদলে গেছে। বাচ্চাদের উন্নতমানের স্কুলে পড়াশোনা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্রুতই উপজেলাসহ অন্যান্য জায়গায় যেতে পারছেন গ্রামের মানুষ।
হরিশপুর গ্রামের আব্দুল কাদের বলেন, এলাকার উন্নয়ন তথা রাস্তাঘাটের জন্য মানুষের নানা ধরনের কাজ বেড়েছে। এতে আয়ও বেড়েছে। নানা ধরনের আয়বর্ধক কাজে জড়িত হয়ে সবাই এখন অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল।
এলাকার অধিকাংশ ছেলেমেয়ে স্কুলে যায়। যারা অন্যের জমিতে কাজ করতেন তাদের অনেকেই ছোটখাটো ব্যবসা বা বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করছেন। কেউ কেউ অটোরিক্সা বা ভাড়ায় চালিত অটোবাইক চালিয়েও জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সন্ধ্যার পর এসব এলাকা ছিল ‘ঘুমন্ত গ্রাম’। আর এখন এসব গ্রাম গুলো সন্ধা হলেই আলোকিত হয়ে উঠে। এদিকে, গ্রামের মহিলারা গরু, ছাগল লালনপালনের পাশাপাশি বাড়ির পাশে নানা ধরনের সবজির বাগান করেছেন। একসময় ধান আর আখ ছাড়া এসব এলাকায় যাতায়াতের সঙ্কটের জন্য অন্য ফসল আবাদ করত না কেউ। আর বর্তমানে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সবজির বাগান হচ্ছে।
বাণিজ্যিকভাবে করলা, শসা, লাউ, কুমড়া, বেগুন উৎপাদিত হচ্ছে এবং উৎপাদিত পণ্য দ্রুতই বাজারে পাঠাতে পারছেন। যাদের কুরের ঘর ছিল অর্থনৈতিক সচ্ছলতায় তারা এখন আরও ভালমানের ঘর তৈরি করছেন। বাউরিয়া গ্রামের শরিফা বেগম বলেন, লাউ আর লালশাক করেছিলাম বিক্রির জন্য। একদিনও বাজারে যেতে হয়নি। পাইকাররা (পাইকারি ক্রেতা) আমার ক্ষেত থেকেই সব নিয়ে যায়।
গত কয়েক বছরে পাল্টে গেছে প্রান্তিক জীবন, পাল্টে গেছে অনেক গ্রাম। বছরে দু’একবার যারা শহর থেকে নিজ গ্রামে ফেরেন বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে উন্নয়নের চিত্র দেখে তারাও অবাক হয়ে যান। সেই সঙ্গে মনের অজান্তেই স্বপ্ন বুনেন শহর ছেড়ে সন্দ্বীপে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার।
তিনি আরও বলেন, যাদের বাড়ি-ঘর নেই সরকার নিজ উদ্যোগে গুচ্ছগ্রামে গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি সরকার অনুদানের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের বাড়ি -ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন। গ্রামের সড়ক ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে সোলার বাতির মাধ্যমে শহরের মতো সড়ক বাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন গ্রামে বসেই শহরের অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন গ্রামের মানুষ।