ফেনী সদর উপজেলায় পিকনিকের বাস দুর্ঘটনায় সাতজন, ফরিদপুরে দুই বাসের সংঘর্ষে তিনজন এবং সিরাজগঞ্জে চার বাসের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছে। ঘটনাগুলো সবই ঘটেছে আজ (বৃহস্পতিবার)।
ঈদের ফিরতি যাত্রাসহ নানা বিনোদনমূলক ভ্রমণ উপলক্ষে সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল বেড়েছে। রাস্তা তুলনামূলক ফাঁকা থাকায় যানচালকেরা কিছুটা বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে, আর রাস্তা বৃষ্টিস্নাত থাকায় ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। প্রতিবছর ঈদপরবর্তী সময়ে এধরণের ঘটনাগুলো বেশি ঘটতে দেখা যায়।
গেল ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে ১৪ দিনে সারাদেশে ১৫৩টি দুর্ঘটনায় ২০১ জন নিহত হয়েছে, আর আর আহত হয়েছে ৪০৯ জন। ১৪ জুন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছিল রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এবারের ঈদুল আযহার আগে-পরের পরিসংখ্যানও হয়তো আসবে কিছুদিনে মধ্যে।
এর আগের বছরগুলোর পরিসংখ্যানও প্রায় চমকে ওঠার মতো। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ২০১৬ সাল থেকে ঈদের আগে ও পরে মোট ১৩ দিনের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করে আসছে। তাদের হিসেবে ২০১৬ সালে ঈদুল ফিতরের আগে পরে ১৩ দিনে ১২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮৬ জন নিহত হন। আহত হন ৭৪৬ জন। ২০১৭ সালে একই সময়ে সারাদেশে ২০৫টি দুর্ঘটনায় ২৭৪ জন প্রাণ হারান। আহত হন ৮৪৮ জন। আর ২০১৮ সালে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হওয়ার তথ্য দেন তারা। বিষয়গুলো খুবই উদ্বেগের।
ঈদের আগে-পরের এইসব দুর্ঘটনার কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিউট( এআরআই) এবং বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি কর্তৃপক্ষ সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওযার কারণ হিসেবে পাঁচটি বিষয়কে চিহ্নিত করে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিভিন্নসময়ে। ১. যাত্রী বৃদ্ধির ফলে ট্রিপ বাড়া, ২. বেশি ট্রিপ দিতে বেপরোয়া গতি, ৩. সড়কে অবৈধ চালক এবং যানবাহন বেড়ে যাওয়া, ৪. সড়কের বেহাল অবস্থা এবং ৫. যাত্রীদের তাড়াহুড়ো। সারাবছর দেশে গড়ে ৫ হাজারের কাছাকাছি প্রাণহানি হয় সড়ক দুর্ঘটনায়, আর শুধুমাত্র দুই ঈদের আগে-পরেই মোট সংখ্যার ৬ ভাগের একভাগ নিহত হয়।
দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করার পাশাপাশি তারা কিছু সমাধানের পথও বলেছেন। তিন থেকে পাঁচদিনের ছুটির পরে হুট করে যান চলাচলের কারণে যানচালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কিছুটা অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। এই সময়ের জন্য আলাদা করে আগে থেকেই পরিকল্পনা করা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ অংশগুলো চিহ্নিত করে স্থায়ী ডিভাইডার, নয়তো অস্থায়ী ডিভাইডার স্থাপন করাও পরামর্শ দিয়ে থাকেন তারা। কারণ বেশিরভাগ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে একাধিক যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে। হাইওয়ে পুলিশ, টহল পুলিশসহ প্রশাসনেরও একটি বড় ভূমিকা থাকা দরকার বলেও বিশেষজ্ঞদের মতের সঙ্গে আমরাও একমত। জনগণকেও তাড়াহুড়া না করে হতে হবে সচেতন।
আমাদের আশাবাদ, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু সমন্বয়ে ও কার্যকর পদক্ষেপে সড়ক দুর্ঘটনার মতো মর্মান্তিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে কমে আসবে।