চট্টগ্রাম থেকে: মোহাম্মদ ইব্রাহিম। কলকাতায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ভারতকে কাঁপিয়ে দেয়া বাংলাদেশ দলের নেপথ্যের অন্যতম নায়ক। সল্টলেকে শুরু থেকেই গোলের জন্য ঝাঁপিয়েছেন, দেয়াল হয়ে বাঁচিয়েছেন গোল। ডি-বক্সে তাকে দুবার ফেলে দিয়েছে ভারত। তার বাঁকানো একটি দূরপাল্লার শট লেগে ফিরেছে বারে। গোল পাননি, কিন্তু সুনিল ছেত্রীর দলকে প্রলয় নাচ নাচিয়ে বাংলাদেশি ফুটবলপ্রেমীদের চোখে লড়াকু যোদ্ধা এ মিডফিল্ডার।
ভারত মিশন শেষে খুব একটা বিশ্রামের সময় পাননি ইব্রাহিম। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে চলে এসেছেন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে অংশ নিতে। অবশ্য চট্টগ্রামেরই ছেলে ইব্রাহিম, বেশ মুখিয়ে আছেন নিজ শহরের দর্শকদের জয় উপহার দিতে। লক্ষ্যটা অবশ্যই শিরোপা জয়ের।
‘শেখ কামাল টুর্নামেন্ট মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বসুন্ধরা কিংস লিগের চ্যাম্পিয়ন হয়েই এই আসরে খেলার সুযোগ পেয়েছে। আর এই আসরে বড় বড় ক্লাবগুলোই খেলে। আশা করি ভালো ফলাফল হবে।’
গত মৌসুমে প্রথমবারের মতো পেশাদার লিগে অংশ নিয়েই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগসহ দুই শিরোপা ঘরে তুলেছে বসুন্ধরা। সেই দলটা এবার আরও সুসংগঠিত। জাতীয় দলের ৮ খেলোয়াড় প্রস্তুত দলটির হয়ে মাঠ মাতাতে। ইব্রাহিম ছাড়াও ক্লাবটিতে আছেন মাহাবুবুর রহমান সুফিল, ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান, মিডফিল্ডার রবিউল হাসান, উইঙ্গার বিপলু আহমেদ, ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ ও সুশান্ত ত্রিপুরারা।
এমন গোছানো ও সুসংগঠিত দল নিয়ে এবার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের হট-ফেভারিট কিংসরা। ইব্রাহিমের চোখে এটি যেমন ক্লাবের জন্যও দরকারি, তেমনি উপকার পাবে জাতীয় দলও।
‘আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট চেয়েছিলেন আগেরবারের চেয়েও ভালো এক দল গড়তে। সেজন্যই জাতীয় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। অন্যান্য দলের চেয়ে আমাদের দলটা এবার ভালো লড়াই উপহার দেবে।’
‘সবচেয়ে বড় কথা হল আমাদের বোঝাপড়াটা ভালো হচ্ছে। আগে অনেকেই ছিল অন্য ক্লাবে। এবার প্রায় সবাইকে পাচ্ছি একসঙ্গে। জাতীয় দলেও, ক্লাবেও। জাতীয় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই এখন বসুন্ধরা দলে। এটা যেমন জাতীয় দলের জন্যও ভালো তেমনি ক্লাবের জন্যও ভালো। আমাদের বোঝাপড়া ভালো হচ্ছে দিন দিন। আমরা উন্নতি করছি।’
এবারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ঘিরে বাড়তি এক উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বন্দরনগরীর দর্শকদের মাঝে। আসরের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনীকে মাঠে এসে সমর্থন যুগিয়েছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি দর্শক। গোকুলম কেরালার বিপক্ষে মঙ্গলবার বসুন্ধরার ম্যাচে দর্শকের সংখ্যাটা বাড়তেই পারে। এসবের মূলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে কলকাতায় বাংলাদেশের চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স। সেই ম্যাচের পরেই মরা গাঙ্গে জোয়ার আনার মতো করে লাল-সবুজের ফুটবলের জন্য তৈরি হয়েছে বাড়তি এক উত্তেজনা।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচের পর দর্শক যেমন বাড়ছে, বাড়ছে খেলোয়াড়দের উদ্যমও। ১৫ অক্টোবরের ম্যাচের পর অনেকেই বলেছেন যেকোনো চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। ইব্রাহিমের গলার সুরও অনেকটা তেমনই। তবে তার কাছে চ্যালেঞ্জ মানে শুধু ভালো খেলাই নয়, চ্যালেঞ্জ খেলার মানটা ধরে রাখা।
‘আসলে আমরা এই সময়ে কয়েকটা ম্যাচ খেলেছি। তবে ভারতের বিপক্ষে যেরকম ম্যাচ খেলেছি, এরকম কয়েকটা ম্যাচ খেললেই আসলে আত্মবিশ্বাস এমনিতেই বেড়ে যায়। আমাদের উচিত এই মানটা ধরে রাখা। যদি ধরে না রাখতে পারি তাহলে এই খেলার কোনো মূল্য থাকবে না। চেষ্টা থাকবে এটা ধরে রাখার।’
‘যদি আপনি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেন, তাহলে আর কোনো অনুপ্রেরণার দরকার পড়ে না। কারণ তখন আপনি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমি যখন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেই, আমার কোনো মোটিভেশনের দরকার পড়ে না।’
সল্টলেকে ভারতের ৭০ হাজার দর্শক চেয়েছিল হুঙ্কারে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ঘাবড়ে দিতে! কিন্তু ইব্রাহিমের চোখে সেটা শাপে-বর হয়েছে লাল-সবুজদের জন্যই, ‘এত দর্শকের মাঝে আগে আমরা কখনো খেলিনি। যেহেতু এত দর্শকের মাঝে এটা আমাদের প্রথম ম্যাচ, আমরা চেয়েছিলাম খেলাটাকে স্মরণীয় করে রাখতে। আমরা তা করেছিও।’
সেই ম্যাচে রেফারি খেলা শুরুর বাঁশি বাজানো মাত্রই বল টেনে ভারত ডি-বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন ইব্রাহিম। কিন্তু ভারতীয় ডিফেন্ডার রাহুল ভেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেও রেফারি পেনাল্টি দেননি। পরে অষ্টম মিনিটে আরও একবার সেই রাহুল ভেকেই ডি-বক্সে ইব্রাহিমকে ফেলে দিলেও চোখ ঘুরিয়ে রেখেছিলেন সিরিয়ান রেফারি মাসুদ তুফালি।
যে দুবার ডি-বক্সে পড়ে গেছেন তার একটি পেনাল্টি পেলেও ফলটা অন্যরকম হতে পারতো ম্যাচে। সাদ উদ্দিন ৪২ মিনিটে বাংলাদেশকে এগিয়ে দিলেও খেলা শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে ভারতীয় ডিফেন্ডার আদিল খানের হেডে জেতা ম্যাচে ড্র নিয়ে খুশি থাকতে হয়েছে জেমি ডের দলকে।
ইব্রাহিম বলছেন, রেফারি তার সঙ্গে সঠিক বিচারটি করেননি। ডি-বক্সের দুই ফাউলে অন্তত একটি পেনাল্টি পেতেই পারতো বাংলাদেশ, ‘আসলে দুই পেনাল্টির অন্তত একটা পাওয়া উচিত ছিল। প্রথমটা অন্তত দেয়া যেতই। রেফারি কী করলেন, কেনো দিলেন না সেটা বোধগম্য নয়।’