সদ্যসমাপ্ত আইসিসি বিশ্বকাপের শুরু থেকে আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। দুটি সেমিফাইনাল তো বটেই, এমনকি ফাইনাল ম্যাচও বাদ গেল না সেই তালিকা থেকে। বরং ফাইনালের বিতর্কিত অধ্যায় বদলে দিয়েছে শিরোপার ভাগ্যই!
বিতর্কের কেন্দ্রে ইংল্যান্ড ইনিংসের শেষ ওভারের ওভার-থ্রো। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১৫ রান। ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম দু’বলে কোনো রান নিতে পারেননি বেন স্টোকস। তৃতীয় বলে ছক্কা মারেন। চতুর্থ বলে ভাগ্যের জোরে ৬ রান পেয়ে যায় ইংলিশরা। দু’রান নেয়ার সময় রানআউট থেকে বাঁচতে ডাইভ দেন স্টোকস। গাপটিলের ছোঁড়া বল স্টোকসের ব্যাটে লেগে বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ওভার-থ্রো’র সৌজন্যে ইংল্যান্ড ৬ রান না পেলে ম্যাচ টাই হতো কী না সন্দেহ। টেলিভিশন রিপ্লে’তে স্পষ্ট দেখা যায় যে, ডিপ মিডউইকেট থেকে গাপটিল বল ছোঁড়ার সময় স্টোকস ও তার নন-স্ট্রাইক পার্টনার আদিল রশিদ দ্বিতীয় রানের জন্য পরস্পরকে ক্রস করেননি।
আইসিসি’র নিয়ম (১৯.৮) অনুযায়ী ওভার থ্রো’র বাউন্ডারির ক্ষেত্রে ফিল্ডার বল ছাড়ার মুহূর্তে ব্যাটসম্যানরা পরস্পরকে ক্রস করলে তবেই তাদের ফিল্ড রান যোগ হবে ওভার-থ্রো’র বাউন্ডারির সঙ্গে।
তাই যদি হয়, তবে ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে ওভার-থ্রো’র বাউন্ডারির সঙ্গে বাড়তি এক রান যোগ হওয়া উচিত। অথচ ফিল্ড আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা ৬ রানের (২টি ফিল্ড রান ও ওভার-থ্রো’র চার) সংকেত দেন। এক রান কম হলে শেষ ২ বলে জয়ের জন্য তিনের বদলে ৪ রান দরকার হতো স্বাগতিকদের। ম্যাচের ছবিটা তখন বদলে যেতেও পারত।
ইংল্যান্ডকে এই ছয় রান দেয়া ঠিক হয়নি বলে জানাচ্ছেন আইসিসির তিনবারের সেরা সাবেক আম্পায়ার ও ক্রিকেট আইন প্রণয়নকারী সংস্থা এমসিসির উপ-কমিটির অন্যতম সদস্য সাইমন টোফেল।
ফক্সস্পোর্টস-অস্ট্রেলিয়াকে এই আম্পায়ার বলেন, ‘এটা আম্পায়ারদের জাজমেন্টের ভুল। ইংল্যান্ড ৬ রান নয়, ৫ রান পায়।’
এমসিসির আইন বইয়ের ১৯:৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যাটসম্যান দৌড়ে রান পূর্ণ করার আগেই ওভার থ্রো’তে বাউন্ডারি হলে শুধু ওভার থ্রো’র রান গণনা করা হবে। অর্থাৎ, দৌড়ে নিতে যাওয়া রানটা বাতিল হয়ে যাবে, আর ব্যাটসম্যানও বদল হবে। সে হিসাবে দৌড়ে নেয়া ২ রানের জায়গায় ইংল্যান্ড পেত ১ রান। সঙ্গে স্ট্রাইকিং প্রাপ্তে স্টোকসের জায়গায় থাকতেন আদিল রশিদ। আর শেষ ২ বলে তখন জয়ের জন্য ৪ রান প্রয়োজন হতো ইংল্যান্ডের।
তবে টোফেল মনে করেন না ওই ৬ রান ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওরকম ভুল হওয়া স্বাভাবিক। একজন আম্পায়ারকে অনেক দিক খেয়াল রাখতে হয়। থ্রো বল স্টোকসের ব্যাটে লাগার সময় তিনি কোথায় ছিলেন সেটাও। এটা বেশ কঠিন।’
বেন স্টোকস অবশ্য এমন অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন কেন উইলিয়ামসনসহ পুরো নিউজিল্যান্ড দলের কাছে। তিনি স্পষ্ট জানান, এই ওভার-থ্রো’র জন্য সারাজীবন নিউজিল্যান্ডের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী থাকবেন।
উইলিয়ামসন অবশ্য বিষয়টিকে ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরের’ বলে খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতায় গ্রহণ করেছেন। আর ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগান বলেছেন, ‘এটা এমন একটা বিষয়, যার জন্য উচ্ছ্বসিত হওয়া যায় না। নিউজিল্যান্ডের জায়গায় আমরা থাকলে পরিস্থিতিটা কেমন হতো, ভাবতেই খারাপ লাগছে।’