Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করবে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন

পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা বজায় রেখে বাজারকে স্থিতিশীল ও ভাইব্র্যান্ট রাখতে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান।

মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিমত জানিয়েছেন।

রকিবুর রহমান বলেন: বাজারকে এগিয়ে নিতে হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। পুঁজিবাজারে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মূলধন ২৪ শতাংশ। এসব প্রতিষ্ঠানের ফ্রি ফ্লোট শেয়ার অনেক বেশি। বিনিয়োগকারীদের হাতে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার আছে। বাজারের গতিশীলতা ধরে রাখতে হলে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

পরিচালকেরাই ব্যাংকের অর্থ লোপাট করছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন: ব্যাংকের পরিচালকেরা ব্যাংকের মালিক নয়, তারা শেয়ারহোল্ডার। পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকের উদ্যোক্তা, পরিচালকেরা ২০০৯/২০১০ সালে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে, ১০ টাকার শেয়ার ১৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। সেইসব শেয়ারের দাম এখন ফেসভ্যালু ১০ টাকার নিচে। কিন্তু তারা এখন শেয়ার কিনছেন না কেন?

তবে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া যে সব কোম্পানির মৌলভিত্তি ভাল এবং ফ্রি ফ্লোট শেয়ার বেশি, বাজারে তাদের শেয়ারের দামও বিগত বছরগুলোতে অনেক কমে গেছে। কিন্তু ভাল মৌলভিত্তির শেয়ার ধরে রাখতে পারলে কোনো অবস্থাতেই বিনিয়োগকারীকে লাভ দিতে না পারলেও লোকসান গুণতে হয় না।

ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে বিএসইসিকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দক্ষ ও সৎ ম্যানেজমেন্ট গড়ে তুলতে হবে। ব্যাংক পরিচালকদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা স্বতন্ত্র পরিচালকদের মতামতেরও গুরুত্ব দেয় না।

অনেক ব্যাংক তাদের বোর্ড মিটিং/কমিটি মিটিং এর প্রসিডিংস মিনিটস আকারে রাখেন না, রেকর্ড করে রাখেন। রেকর্ড যেকোনো সময় ধ্বংস করা সম্ভব। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। যেন ব্যাংকগুলো প্রতিটি মিটিংয়ের প্রসিডিংস মিনিটস আকারে রাখেন এবং তা সংরক্ষণ করেন। যা আর্থিক খাতের সুশাসনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে বলে মনে করেন তিনি।

বিবৃতিতে রকিবুর রহমান আরও বলেন: যেসব বিনিয়োগকারী এবং প্রতিষ্ঠানের দুই শতাংশ শেয়ার আছে তাদের পরিচালনা পর্ষদে সহজে যুক্ত করতে হবে। স্পন্সর, পরিচালকদের কোনো ওজর বা আপত্তি গ্রহণ করা যাবে না। পছন্দমত পরিচালক নিয়োগ দেয়া যাবে না। যে সব পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, যারা ঋণ খেলাপি তাদের অবশ্যই ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে।

স্বতন্ত্র পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের যৌথ পরিচালনায় ব্যাংকগুলো দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। লুটপাট বন্ধ হবে। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়বে। এতে বাজার বড় হবে।

“বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর আইনের মধ্যে থাকতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থা যত ভালো থাকবে অর্থনীতি তত ভাল থাকবে। পুঁজিবাজারও ভাল থাকবে। তাই ঋণ খেলাপিকে কঠোর আইনের আওতায় এনে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের লাইফস্টাইলে হাত দিতে হবে। দেওলিয়া আইনের সংশোধন করে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।”

রকিবুর রহমান বলেন, একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক ও গতিশীল পুঁজিবাজার দেখতে চাই। যার মাধ্যমে ভাল শিল্পোদ্যোক্তারা বাজার থেকে টাকা তুলবে এবং তা শিল্প প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ, আবাসন, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করবে। শিল্প উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে অবদান রাখবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ওপর বাড়তি কোনো চাপ থাকবে না, দীর্ঘমেয়াদী শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য বর্তমান বাজারের গতিপ্রকৃতি দেখে বলা যায়, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এসেছে।

Exit mobile version