ধ্রুপদী লড়াইয়ের মঞ্চ প্রস্তুত। প্রস্তুত দুই প্রতিপক্ষও। একদিকে আর্জেন্টিনা, অন্যদিকে ব্রাজিল। ফুটবল ইতিহাসের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের বহুল কাঙ্ক্ষিত লড়াই। মানে বাড়তি উত্তেজনা ও রোমাঞ্চ। মঞ্চটা যদি হয় ফাইনালে ওঠার, রোমাঞ্চটা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টায় কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে লাতিন আমেরিকার দুই জায়ান্ট আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। মেসি-কৌতিনহোর পায়ের জাদু দেখতে প্রস্তুত ফুটবলপ্রেমীরা।
বেলো হরিজন্তের এস্তাদিও মিনেইরোতে কোপার প্রথম সেমিফাইনালে লড়বে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। জয়ী দল একদিন পরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন চিলি ও পেরুর মধ্যকার বিজয়ীর মুখোমুখি হবে।
কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ঘাম ছুটিয়ে জয় পেয়েছিল ব্রাজিল। টাইব্রেকারে জিতে শেষ চারে আসে সাম্বার দেশ। অন্যদিকে গ্রুপপর্বে ধুঁকতে থাকা আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনালে নিজেদের কিছুটা ফিরে পায়। ভেনেজুয়েলাকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ চারের টিকিট কাটে আলবিসেলেস্তেরা।
কোপা আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম সফল দল আর্জেন্টিনা। এখন পর্যন্ত ১৪ বার শিরোপা জিতেছে। সর্বোচ্চ ১৫টি শিরোপা জিতে উরুগুয়ে একধাপ এগিয়ে। সেখানে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮ বার শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল।
মহারণের আগে অতীত ইতিহাস ব্রাজিলকে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। ঘরের মাঠে চারবার কোপা আমেরিকা আয়োজন করে প্রতিবারই শিরোপা জিতেছে সেলেসাওরা। এবারও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চান কৌতিনহো-আলভেজরা।
গত কয়েক বছর ধরে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের ইতি টানার লক্ষ্যে মরিয়া আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। সেই লক্ষ্যে দুই দলের একটি ফাইনালের টিকিট পেলেও একটিকে বিদায় নিতেই হবে। স্বাগতিক হওয়ায় ব্রাজিল কিছুটা এগিয়ে থেকেই মাঠে নামবে। তবে ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ঘরের মাঠে জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হওয়া ব্রাজিলের জন্য স্বাগতিক দর্শকদের চাপ সামলে সেরাটা দেয়া সহজ হবে না!
গত কোপা আমেরিকায় গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। ২০১১ ও ২০১৫ আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় সেলেসাওরা। আর ২০১৫ ও ২০১৬ সালের ফাইনালে টানা হার সঙ্গী হয় আর্জেন্টিনার। সুপার ক্ল্যাসিকোতে জিতে তাই শিরোপায় এক হাত দিয়ে রাখতে মরিয়া চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটি।
২০০৭ সালে শেষবার কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল। সেবার আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে গুঁড়িয়ে শিরোপা উৎসব করেন সেলেসাওরা। একযুগ পর লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিততে মরিয়া তারা।
কোপার অন্যতম সফল দল আর্জেন্টিনা সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে শিরোপা জিতেছে। সেটিই এখন পর্যন্ত আকাশী-নীল জার্সি ধারীদের সর্বশেষ কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা। ২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা এবং ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে হারা আর্জেন্টিনা ২৬ বছর পর প্রথম মেজর শিরোপা জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ব্রাজিলে পা রেখেছে।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সুপার ক্ল্যাসিকোতে মুখোমুখি পরিসংখ্যানে এগিয়ে রয়েছে ব্রাজিল। এখন পর্যন্ত ১১০ বার মুখোমুখি হয়েছে দল দুটি। যেখানে ব্রাজিলের ৪৫ জয়ের বিপরীতে আর্জেন্টিনার জয় ৩৯টিতে। বাকি ২৬ ম্যাচ ড্র হয়েছে।
তবে কোপা আমেরিকার পরিসংখ্যান এগিয়ে রাখছে আর্জেন্টিনাকে। লাতিন শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ৩২ বারের সাক্ষাতে আকাশী-নীলদের ১৬ জয়ের বিপরীতে সেলেসাওরা জিতেছে ১০টিতে। অপর ৬টি ম্যাচ ড্র।
তবে কোপায় ব্রাজিলের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার শেষ জয়টি প্রায় তিন দশক আগের। ১৯৯১ সালে কোপায় সেলেসাওদের ২-১ গোলে হারিয়েছিল আলবিসেলেস্তেরা।
আবার আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কোপায় ব্রাজিলের শেষ জয়টি এক যুগ আগের। ২০০৭ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে মেসিদের ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল সাম্বার দেশ। এরপর অবশ্য কোপায় আর মুখোমুখি হয়নি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল।
দুদলের সর্বশেষ লড়াইয়ে জয়ী দলটির নাম অবশ্য ব্রাজিল। ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর সুপার ক্ল্যাসিকোতে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারায় সেলেসাওরা। সর্বশেষ ছয় সাক্ষাতে ব্রাজিলের তিন জয়ের বিপরীতে আর্জেন্টিনার জয় দুটিতে। অপর ম্যাচটি ড্র।
নজর থাকবে যাদের উপর
কৌতিনহো-ফিরমিনো: ২০০৭ সালের পর প্রথমবারের মতো কোপা আমেরিকার শিরোপা জিততে ফিলিপে কৌতিনহোর দিকেই তাকিয়ে গোটা ব্রাজিল। এখন পর্যন্ত সমর্থকদের আস্থার প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছেন বার্সেলোনার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন রবের্তো ফিরমিনো। সুপার ক্ল্যাসিকোতে যদি কৌতিনহো-ফিরমিনো রসায়ন জমে ওঠে, আর্জেন্টিনার জন্য কঠিন পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে।
মেসি-মার্টিনেজ: কোপা আমেরিকায় এখনো চেনাছন্দে দেখা যায়নি লিওনেল মেসিকে। তবে নিজের দিনে মেসি কী করতে পারেন সেটি কারো অজানা নয়। ২০১২ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলের মধুর জয় এনে দিয়েছিলেন কিং লিও। ক্ল্যাসিকোতে তাই মেসির কাছ থেকে জাদুকরী পারফরম্যান্সই আশা করছে আকাশী-নীল সমর্থকরা।
চলতি বছর আর্জেন্টিনার হয়ে ৬ ম্যাচ খেলে ইতোমধ্যেই ৫ গোল করে ফেলেছেন লৌতারো মার্টিনেজ। কোপা আমেরিকায়ও রয়েছেন দারুণ ছন্দে। সুপার ক্ল্যাসিকোতে মেসির সঙ্গে জুটি বাঁধবেন ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ড। এই দুজনের জুটি জমে গেলে ব্রাজিলকে হারিয়ে টানা তৃতীয় ফাইনালের স্বপ্ন দেখতেই পারে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মধ্যকার লড়াই যেমন দলীয় নৈপুণ্যের, তেমনটি কৌশলেরও। ৯০ মিনিট দুই দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি স্নায়ুরও বড় পরীক্ষা হয়ে যায়। চাপ সামলে স্নায়ুর পরীক্ষায় উতরে যে দল নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিতে পারবে, মারাকানার ফাইনালের টিকিট পাবে তারাই।