Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

আমানতের তুলনায় সুদ বেশি থাকায় রেকর্ড পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট আয় হয়েছে ২৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেড় শতাংশ বেশি এবং পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ এর আগে কোনো অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের এত বেশি আয় হয়নি। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আমানত ও সঞ্চয়পত্রের সুদ হার বিশ্লেষণ ও অর্থনীতিবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংক আমানতে সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশ। আর বিভিন্ন মেয়াদী সঞ্চয় প্রকল্পের সুদহার প্রায় ১১ থেকে ১২ শতাংশ। এই হিসাবে সঞ্চয়পত্রে ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদ বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া সরকারি এফডিআর এ সুদ হার কমে গেছে। এসব কারণে মানুষ ব্যাংকে আমানত না রেখে সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে। সে জন্য রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি।

অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে মোট আয় হয় ৩৯ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। আগের বিক্রি থেকে এই সময়ে ৯ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা সুদসহ মোট পরিশোধ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট আয় দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই খাত থেকে সরকার নিট আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

তবে ২৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৮৬ কোটি বেশি। ওই সময় এই আয় ছিল ২৩ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এই খাত থেকে আয় হয় ১৩ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে আয় বাড়ে ৭৬ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

সাধারণত আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধের পর যে পরিমাণ অর্থ অবশিষ্ট থাকে, সেটাই হচ্ছে নিট বিনিয়োগ। বিনিয়োগের ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় করে। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতিমাসে মুনাফা দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সরকার এফডিআরে সুদ হার কমিয়েছে। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে সুদ হার তেমন কমেনি। তাই এর বিক্রি বাড়ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ চ্যানেল আই অনলাইনক বলেন, মূলত ব্যাংকের এফডিআরের সুদ হার কমে যাওয়ায় মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে বিনিয়োগ করছে। তাই সঞ্চয়পত্র বিক্রি তুলনামূলক বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবছরই বাজেটের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে মাত্র ৮২৪ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ আসায় পরবর্তী অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু পরের অর্থবছর থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়ে যায়।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাজেটে লক্ষ্য ছিল ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট আয় হয় ১১ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এর তিনগুণেরও বেশি ২৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা আয় হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে ১৫ হাজার কোটি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বছর শেষে আয় হয় ৩৪ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত অর্থবছরের মূল বাজেটে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বছর শেষে ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা নিট আয় হয়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে।

২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ গড়ে কমিয়ে আনা হয় ২ শতাংশ। এরপরও বর্তমানে ব্যাংক আমানতে সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশ। অন্যদিকে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদহার ১১ থেকে ১২ শতাংশের কাছাকাছি।

বর্তমানে বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রের মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে সুদ পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। এছাড়া তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়।

Exit mobile version