১৯৯৬ সালে তালেবানরা যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে, তখন অনেকগুলো বিষয়ে বিধি-নিষেধের আদেশ দেয় তারা। নিষিদ্ধাদেশের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা বন্ধ করা। যার মধ্যে দেশটির জাতীয় খেলা বুজখাসহিও (ঘোড়া নিয়ে খেলা) ছিল।
কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কয়েকটি খেলা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তবে মহিলাদের কোনো লাইভ ম্যাচ দেখার অনুমতি ছিল না এবং খেলোয়াড়রা শর্টস বা অনৈতিক বলে চিহ্নিত এমন কোনো কিছু পরতে পারতেন না। স্টেডিয়ামে কোনো দলের প্রতি উদ্দাম সমর্থনের অনুমতিও ছিল না।
কিন্তু অনেক বিধি-নিষেধের মধ্যে বিস্ময়করভাবে তালেবান শাসন বিশেষ একটি খেলার প্রচার করতে চেয়েছিল এবং সেটা ছিল ক্রিকেট।
কট্টরপন্থী এই মিলিসিয়া বাহিনী আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে (এসিবি) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সদস্য হওয়ার অনুমতি দেয়। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটির হাজার হাজার মানুষের দুঃখ, বেদনা ও উদ্বেগ উপশম করতে ২০০১ সালে আইসিসির সদস্য হয় এসিবি।
যদিও জাতীয় খেলা ছিল না, কিন্তু ক্রিকেটই আফগানিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ছিল। স্থানীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্ট খেলার জন্য ক্রিকেটাররা সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশি পাকিস্তানে যেতেও অনুমতি পেতেন।
২০০১ সালের মে’তে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম পাকিস্তান সফর করে আফগানিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দল। তারপর থেকেই একটু একটু করে শক্তি বাড়াতে থাকে আফগানরা এবং ২০১৭ সালের ২২ জুলাই আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলতি এশিয়া কাপে খেলছে আফগানিস্তান। আফগান দলের জন্য এই এশিয়া কাপই জয়লাভের প্রথম বড় রাস্তা করে দেয়। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচ খেলবে তারা। ২০১৪তে এই বাংলাদেশের বিপক্ষেই এশিয়া কাপে প্রথম জয় পেয়েছিল আফগানরা।
আনন্দের সঙ্গে অবশ্য হতাশাও আছে। ২০১৪ এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে হারানোর পর ২০১৫ আইসিসি বিশ্বকাপে হতাশ হয় তারা। ওই টুর্নামেন্টে একমাত্র স্কটল্যান্ড ছাড়া আর কোনো দলের বিরুদ্ধেই জয় পায়নি আফগানরা।
হতাশার পেছনে চলতি বছর আয়ারল্যান্ড সফর দিয়ে সফলতার দরজা খোলে আফগানিস্তান। এই রাস্তায় অবশ্য ওঠা-নামা আছে রশিদ খান-মোহাম্মদ নবিদের। কিন্তু এখন তারা স্পটলাইটে আসতে প্রস্তুত।
কেউ যদি এখন আফগানিস্তানে যান, তিনি দেখতে পাবেন রাস্তায়, মাঠে বা যেকোনো খোলা এক টুকরো জমিতে ক্রিকেট খেলতে ব্যস্ত সেদেশের তরুণরা। সেখানে আবেগ আছে, কিন্তু অবকাঠামো এবং সমর্থন নেই।
কোনো সুবিধা না থাকায় মাঠে এবং স্থানীয় কোচ, তরুণ খেলোয়াড়রা টেনিস বল ব্যবহারে অভ্যস্ত হচ্ছেন। টি -টুয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সুবিধা, কারণ এতে দ্রুত রান উঠছে। কিন্তু যখন লাল টেস্ট বল মোকাবেলা করছে, তখন সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়রাও হোঁচট খাচ্ছেন। আর কোচরা তাদের কৌশল সংশোধন করার ক্ষেত্রে একটি কঠিনতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
আফগানিস্তানের এই সমস্যা তাদের ব্যাটিং লাইনআপে দেখা যাচ্ছে। স্কিলের চেয়ে তারা ভাগ্যের উপর বেশি নির্ভর করছেন। আর এই কারণেই লংগার ভার্সনে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে আফগানিস্তান।
এসকল জটিলতা সত্ত্বেও আফগানিস্তানের অধিনায়ক আসগার আফগান এশিয়া কাপের শুরুতে তার দলের সম্ভাবনা সম্পর্কে আস্থার কথা বলেছেন। এশিয়া কাপের শুরু থেকেই আফগান মিডিয়া ও জনগণ এ নিয়ে প্রবল আগ্রহী এবং তাদের দল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা দল এখন নিজেদের সর্বনিম্ন অবস্থায় আছে। সিনিয়র অনেক খেলোয়াড় অবসর নিয়েছেন। লাসিথ মালিঙ্গাও সেই আগের চেনারূপে নেই।
অন্যদিকে, আফগানিস্তান সদ্যই একটা সফল সফর শেষ করেছে এবং আগেই মনে করা হচ্ছিল আরব আমিরাতের স্লো পিচে তাদের জন্য কাজটা সহজ হবে। এটা দুনিয়াকে কিছু দেখানোর জন্য আফগানদের জন্য একটা সুযোগও ছিল। সেই সুযোগে তারা শুধু একবার টান দিয়েছিল এবং সেটা করেছে দর্শনীয় কায়দায়।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শ্রীলঙ্কাকে ৯১ রানে উড়িয়ে দেয় আফগানিস্তান। আফগানদের এই বার্তা খুবই জোরাল এবং পরিষ্কার। হুশিয়ার! ক্রিকেট দুনিয়ায় নতুন চ্যালেঞ্জার এসে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র আহমদ রাজ্জাকের লেখা অবলম্বনে।