চীনের উহান প্রদেশ থেকে ৩৬১ জন বাংলাদেশি বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনছে সরকার। দেশে ফিরিয়ে এনে তাদেরকে এয়ারপোর্ট এর বিপরীত দিকে আশকোনাস্থ হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হবে। সে সময় তাদের সঙ্গে পরিবারসহ কেউই দেখা করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন: চীনে প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক মানুষজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে বাংলাদেশে এ রোগের কোন প্রভাব নেই। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন সন্দেহজনকভাবে ভর্তি রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে সেটা শেষ হলেই বোঝা যাবে।
মন্ত্রী আরও বলেন: চীনের উহান প্রদেশ থেকে প্রায় ৩৬১ জন বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য আবেদন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদেরকে অতি দ্রুত ফিরে আনার ব্যবস্থা আমরা করেছি। এখানে যারা ফেরত আসছে আমাদের জানা মতে তারা কেউই কারোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন। তারপরও তারা পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তাদেরকে প্রথমে আশকোনার হজ ক্যাম্পে রাখা হবে। সেখানে তারা ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে থাকবেন। এসময় তারা পরিবারের সদস্যসহ কারো সাথে দেখা করতে পারবেন না। পরিবারের সদস্যদের কাছে আমরা নিয়মিত খবর প্রেরণ করব।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট উহানে এই বাংলাদেশীদের ফেরত আনতে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকেল পাঁচটায় আমাদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট সেখানকার উদ্দেশ্যে যাবে। আনুমানিক রাত দুইটার মধ্যে তাদেরকে নিয়ে বাংলাদেশে এই ফ্লাইটটি অবতরণ করবে। এই বিমানেও ৫ জন চিকিৎসক থাকবেন যারা সম্পূর্ণরূপে প্রটেক্টেড।
এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স এর সকল সুযোগ সুবিধাও থাকবে এই বিমানে। ওই ৩৬১ জনকেও প্রটেক্টেড অবস্থায় বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। এমনকি হজ ক্যাম্পে তাদেরকে আলাদা ভাবে নিয়ে রাখা হবে। হজ ক্যাম্পে তাদেরকে ১৪ দিন রাখা অবস্থায় যদি কেউ অসুস্থ হয় তাহলে চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড এবং মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা প্রদানের জন্য পুলিশ ও সেনাবাহিনী সর্বদা মোতায়েন থাকবে।
পর্যবেক্ষণের ১৪ দিনের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনদের এসে দেখা করতে না চাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিদেশ ফেরত দেখার জন্য আত্মীয়-স্বজনরা ব্যাকুল হবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি অনুরোধ করবো কেউ তাদের সাথে দেখা করতে চাইবেন না, তারা কেউ কারো সাথে দেখা করতে পারবেন না।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আত্মীয়স্বজনদের উদ্দেশ্যে একই মন্তব্য করে বলেন, চীন ফেরত এই বাংলাদেশিদের সঙ্গে স্বজনরা দেখা করার জন্য যেন উঠে পড়ে না লাগে। সেদিকে আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীল। তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্তদের কথা শুনে শুনে অনেক আগে থেকেই বলছেন বাংলাদেশীদের ফেরত নিয়ে আসতে। এর আগে চীন সরকার আমাদেরকে বলেছিল ১৪ দিনের আগে তাদেরকে ফেরত দেওয়া যাবে না। অবশেষে গতকাল সন্ধ্যায় তারা জানিয়েছে তাদেরকে ফেরত দেওয়া সম্ভব। সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন তাদেরকে ফেরত আনতে। ৩৬১ জন এর মধ্যে রয়েছে ১৯ টি পরিবার, ১৮ জন শিশু এবং দুটি শিশু রয়েছে যাদের বয়স দুই বছরের নিচে। আমরা খুব অল্প সময়ে সব কিছু প্রস্তুত করেছি। এর থেকেই আমরা বুঝতে পারছি যে বাংলাদেশের ক্যাপাসিটি আছে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য। গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের আনার সিদ্ধান্ত হয় এবং আমরা যে প্রক্রিয়ায় সফল হচ্ছি।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, উহানে আমাদের কোন সরাসরি ফ্লাইট নেই। অন্ধপ্রদেশ গিয়ে সেখান থেকে ওখানে যাওয়া হয়। এই ফ্লাইটটি এখন সরাসরি গেলেও যেহেতু উহানে কোন সরাসরি ফ্লাইট নাই এই মুহূর্তে চীনের সাথে ফ্লাইট এর যোগাযোগ বন্ধ করার কোন সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। তবে আমরা সেখানে মানুষজনকে ভ্রমনে যেতে অনুৎসাহিত করছি। কিংবা যারা আসছেন তারা আসার পরে বিমানবন্দরে নিয়মিত চেকআপ করছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনার জন্য অবস্থান করে। এর মধ্যে উহানে ২২টি ইনস্টিটিউটে আমাদের শিক্ষার্থীরা রয়েছে। সেখানকার সবাই আবার আসতে চায়নি। এদের মধ্যে যারা শুধু আসতে চলেছে তাদেরকেই আমরা আনার ব্যবস্থা করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো আশাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা আবুল কালাম আজাদ সহ সংশ্লিষ্টরা।