সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন ভাষাসংগ্রামী, জাতীয় অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।
বুধবার ১ ডিসেম্বর বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান লেখক, বিশিষ্ট নজরুল গবেষক, বাংলা একাডেমির সভাপতি, জাতীয় অধ্যাপক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
আজ দুপুরে তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়ার পর প্রথমে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের পক্ষে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে।
তার কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আকতারুজ্জামান, ঢাকা দক্ষিণ কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
এছাড়া জাতীয় অধ্যাপকের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, যুবলীগ সভাপতি, ছাত্রলীগ সভাপতি এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতায় উপস্থিত সবার কাছে রফিকুল ইসলামের জন্য দোয়া চান তার ছেলে বর্ষণ ইসলাম। পরে কফিন নেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে শায়িত হন এই ভাষাসংগ্রামী।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মরদেহ আজ দুপুর ১টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়।
উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের রানাভোলা মহিলা মাদ্রাসা মসজিদ মাঠে মঙ্গলবার বাদ এশা প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এভারকেয়ার হাসপাতালে মরদেহ রাখা হয়।
রফিকুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে রফিকুল ইসলামের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে লেখাপড়া শেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বে উচ্চশিক্ষা নেন।
তিনিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক।
ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেয়া রফিকুল ইসলাম সেই সময়ের দুর্লভ আলোকচিত্র ধারণ করেছেন নিজের ক্যামেরায়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর হাতে বন্দি জীবনও কাটাতে হয়েছে তাকে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থটিসহ প্রায় ৩০টি বই তিনি রচনা করেছেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য রফিকুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসেরও উপাচার্য ছিলেন। ২০১৮ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক করেন। এক সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করা রফিকুল ইসলামকে গত ১৮ মে বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিল সরকার। আমৃত্যু তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন।