পুরান ঢাকার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার রেশ না কাটতেই বনানীর বিশাল ভবনে দাউদাউ করে জ্বলে উঠে আগুন। যার ভয়াবহতার দৃশ্য দেখে আতংকিত হয়েছে সারাদেশের মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরে চলে আগুন নেভানোর চেষ্টা। ফায়ার ব্রিগেড, সেনা নৌ বিমান বাহিনী মিলে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে উদ্ধার করে ভবনে আটকে পড়া মানুষদের। চারদিকে মানুষের আর্তনাদের আহাজারি। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ফায়ার ব্রিগেড নিজেদের কার্যক্রম নিয়ে পড়ে বিপাকে। অনেক দুর্বলতা আর অপ্রতুলতা নিয়ে ফায়ার ব্রিগেড প্রতিবার আগুন নির্বাপণে সফল হয়। যার জন্য তাদের জানাই সাধুবাদ।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এমন পরিস্থিতির স্থায়ী কোন সমাধান নাই কেন। পুরনো ঢাকা থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকাতে একই অবস্থা। অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা যে এর জন্য দায়ী তা বারবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে আর কতবার দেখাতে হবে প্রশাসন ও জনগণকে ।
অতীব সত্য হলো, ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না এ সমাজ। যার ফলশ্রুতিতে নিজেদের লোভাতুর চাহিদাতে দগ্ধ হয়ে মরছে মানুষ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাতে।
হতাহত মানুষদের নিয়ে হা হুতাশ থাকে কদিন। এরপর ভুলে যায় দেয়ালের পর দেয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠা ভবনগুলো যে মরণ ফাঁদ। কোন নিয়ম নীতি মেনে তৈরি হয় না এখানে ইমারত। এমন কি নিজের ঘরের সামনে রাস্তার জন্য ও এক ইঞ্চি জায়গা ছাড় দিতে নারাজ। অথচ কোন যাদুতে তারা রাজউকের অনুমোদন পায় ইমারত নির্মাণের সেটাই বড় প্রশ্ন।
আবার অপরিকল্পিত এ শহরে আবাসিক এলাকাতে রাসায়নিক কারখানা, হোটেল, অফিস ব্যবসা চলে অবাধে। বিশাল বিপদজনক কোন কারখানা বা হোটেলের উপরে বাস করে মানুষ। এসব জায়গাতে যখন কোন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তখন তদন্ত কমিটি গঠন থেকে শুরু করে অনেক বিষয় আলোচনাতে আসে। দায়িত্ববান ব্যক্তিরা খুব উচ্চস্বরে বলে, ‘অনিয়মকারীকে ছাড় দেয়া হবে না। ‘ কিন্তু আজ পর্যন্ত কজন ব্যক্তি অনিয়মের কারণে শাস্তি পেয়েছে তা অজানা।
বনানীর বাতাসে সপ্তাহান্তে সরে যাবে পোড়া লাশের গন্ধ। আর সে সাথে ফাইল বন্দি হবে সকল তদন্ত ও পদক্ষেপ। কেবল স্বজন হারানো প্রিয়জনরা বয়ে বেড়াবে দগ্ধ স্মৃতি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)