Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

অস্ট্রেলিয়ায় ‘অসুস্থ’ সু চি, জনসম্মুখে ভাষণ বাতিল

অং সান সু চি-মিয়ানমার-রোহিঙ্গা

আসিয়ান-এর বিশেষ সম্মেলনসহ বেশ কয়েকটি আয়োজনে অংশ নিতে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা এবং রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

এ কারণে জনতার উদ্দেশ্যে সু চি’র ভাষণ এবং প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

শুক্রবার থেকে রোববার সিডনিতে আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নেয়ার পর সোমবার ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মালকম টার্নবুলের সঙ্গে দেখা করেন সু চি। পরের দিন মঙ্গলবার ‍সিডনিতে লোউয়ি ইনস্টিটিউট থিংক ট্যাংকের আয়োজনে একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার কথা ছিল তার।

ওই ভাষণ আর তার পরের প্রশ্নোত্তর পর্বই ছিল শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চি’র অস্ট্রেলিয়া সফরে জনসম্মুখে একমাত্র আয়োজন। কিন্তু তার আগের দিনই, সোমবার বিকেলেই অনুষ্ঠানটিতে অংশ নেবেন না বলে সু চি জানিয়ে দেন। এর ফলে আয়োজকরা বাধ্য হন অনুষ্ঠান বাতিল করে দিতে।

ওই থিংক ট্যাংক সংস্থার পক্ষ থেকে এক মুখপাত্র জানান, ‘আজ (সোমবার) বিকেলে মিয়ানমার দূতাবাসের পক্ষ থেকে লোউয়ি ইনস্টিটিউটকে জানানো হয় যে, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চি অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন না কারণ তিনি সুস্থ অনুভব করছেন না। আর এ কারণেই আয়োজন বাতিল করা হয়েছে।’

পুরো আসিয়ান সম্মেলন জুড়েই দক্ষিণ এশীয় বিভিন্ন দেশের নেতারা সু চি’কে রোহিঙ্গা সমস্যা ও এর সমাধান নিয়ে দফায় দফায় প্রশ্ন করেছেন।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সাবধান করে বলেন, দ্রুত সমাধান না করা হলে এই ইস্যু আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। কেননা যারা এই সংকটের শিকার তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে কথিত ইসলামিক স্টেটের মতো চরমপন্থি সংগঠনগুলো।অং সান সু চি-মিয়ানমার-রোহিঙ্গা

সম্মেলনের জন্য সিডনিতে থাকা অবস্থায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও এ ঘটনায় নোবেল বিজয়ী সু চি’র নীরব থাকার প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সিডনির রাজপথ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণও সিডনির রাস্তায় সু চি’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়।

এমনকি কম্বোডিয়ান স্ট্রংম্যান হান সেন এবং ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নগুয়েন শুয়ান ফুক সম্মেলনে বিক্ষোভকারীদের পক্ষ নিয়ে সু চি’র সমালোচনা করেন।

শুধু তাই নয়, শুক্রবার মেলবোর্নের ম্যাজিস্ট্রেটস কোর্টে অং সান সু চি’র বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাইভেট প্রসিকিউশনের আবেদন দাখিল করেন মেলবোর্নের পাঁচজন আইনজীবীর একটি দল।

মামলার আবেদনপত্রে সু চি’র বিরুদ্ধে মিয়ানমারের একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর (রোহিঙ্গা) বিরুদ্ধে মানবতা লঙ্ঘনকারী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাদেরকে জোরপূর্বক নিজ বাসভূমি থেকে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়।

অং সান সু চি তার অবস্থান ও ক্ষমতা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং এ কারণেই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীকে তিনি রোহিঙ্গাদের আবাস থেকে উৎখাত করার অনুমতি দিয়েছেন – এই অভিযোগ থেকে মামলার আবেদন করা হয়েছিল।অং সান সু চি-মিয়ানমার-রোহিঙ্গা

কিন্তু পোর্টার রোববার ওই আবেদনে সম্মতি জানাতে অস্বীকার করে বলেন, সু চি’র বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা যাবে না। কারণ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো দেশের পক্ষ থেকে করা অপরাধের অভিযোগে মামলা বা আইনি প্রক্রিয়া চালানো নিষিদ্ধ।

অ্যাটর্নি জেনারেলের অসম্মতি প্রকাশের কারণে মামলার আবেদনটি খারিজ হয়ে যায়।

অন্যদিকে টার্নবুল সোমবার বৈঠকের আগেই জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবাধিকার নিয়ে সুচির সঙ্গে আলাপ করবেন তিনি।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের কারও কারও ধারণা, এসব সমালোচনার পর জনসম্মুখে আসা এড়ানোও হতে পারে এই ‘অসুস্থতা’র কারণ।

Exit mobile version