Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

অর্থমন্ত্রী এটা কী বললেন?

ফাইল ছবি

১ জুন বাজেট ঘোষণা করলেন আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরদিনই রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘মনে হয়েছে, এবার জীবনের শ্রেষ্ঠতম বাজেট দিয়েছি।’ বড় আনন্দের বিষয় তার জন্য নিঃসন্দেহে। যে জন্য তিনি বলতে পেরেছেন শ্রেষ্ঠতম বাজেট দিয়েছেন। তার এই কীর্তির জন্য তিনি মহান হয়ে থাকুন।

বাজেট ঘোষণার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। কিছু শিরোনাম তুলে দিতে ইচ্ছে করছে। ‘ব্যাংক হিসাবধারীদের ওপর খড়গ।’ ‘ভ্যাট-ভোটের টানাপোড়েনের বাজেট।’ ‘করপোরেট কর কমল না।’ ‘ শিক্ষা খাতে উন্নয়নের প্রতিফলন নেই।’ ‘বাজেটে স্বাস্থ্য উন্নতির কিছু নেই।’ কালোটাকা সাদার সুযোগ থাকল।’ ‘সরকারি ব্যাংকের জন্য আবারও করের টাকা।’ ‘ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশই।’

বাজেট বিশ্লেষণ করতে গিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘এ তো দিনদুপুরে ডাকাতি।’ ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেছেন, ‘আশা অনেক বেশি ছিল।’ বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘করের বোঝার বাজেট জনগণমুখী কীভাবে?’ বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘বাজেট বড় করা লোক দেখানো।’ ‘সিপিডির বাজেট পর্যালোচনা: হিসাব মেলাতে অবাস্তব তথ্য। নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ওপর করের চাপ বাড়বে।’

সাধারণ মানুষ এতসব বোঝে না। সিপিডি’র জ্ঞানগর্ভ কথা, কোন গভর্নর কি বললেন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক কি বললেন, এতকিছু বোঝা বা পড়ার সময় নেই তাদের। সাধারণ মানুষ বোঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে কি না। তাদের ওপর করের বোঝা কতটুকু চাপানো হলো, এতটুকুই। এর বেশি বোঝার দরকার কি?

কিন্তু এইবার যে বিষয় দুটি অনেক সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এড়ায়নি তা হলো ব্যাংকে টাকা জমাতে গেলে, খবর আছে। কাটতে কাটতে শেষ করা হবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কর হিসেবে যে টাকা নেওয়া হবে। সেই টাকা সরকারি ব্যাংকের জন্য রাখা হবে। অর্থাৎ যেসব ব্যাংকে গত আট দশ বছর ধরে লুটপাট হয়েছে। লুটপাট হতে হতে মূলধন সংকটে পড়েছে, তাদের মূলধন জোগাতে সাধারণ মানুষের করের টাকা সেই সব ব্যাংককে দেওয়া হবে।

বিষয়টা এখন আর না বোঝার মত কিছুর মধ্যে নেই। অনেক মানুষ এতদিন বাজেট মানে বুঝতো জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। কিছু জিনিসপত্রের দাম কমবে। কিছু করের ক্ষেত্র বাড়ানো হবে। এসব। কিন্তু এইবার সাধারণ মানুষ পরিস্কার বুঝে গেছে, বাজেটের ভেতর লুটপাটের গন্ধও থাকে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নতুন করে ব্যাংকে টাকা রাখার ওপর কর বাড়ানো হলো, এটা ব্যতিক্রমধর্মী পশ্চাৎপসরণ। সার্বিকভাবেই তো আমানতের ওপর সুদ কমছে। এর ফলে আমানতকারীরা দুভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুদ কমছে, করও বাড়ছে। এ সিদ্ধান্তটাকে তিনি আত্মঘাতী বলেছেন।

অন্যদিকে, লুটপাট হয়ে যাওয়া ব্যাংকের জন্য মূলধন জোগান প্রসঙ্গে, বাংলাদেশ সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, ‘জনগণের ব্যাংক হিসাব থেকে কর কেটে নেওয়া হবে, আবার সেই টাকা দেওয়া হবে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন জোগানে। এটা একটা অনৈতিক কাজ।

সাধারণ মানুষ একটা বিষয় পরিস্কার বুঝে গেছে, এ সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে যে চুরি ডাকাতি হয়েছে। তা পুষিয়ে আবার চোরদের চুরি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী বাজেটে ওই বিষয় দুটি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যদিও জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত অর্থ বছর পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা মূলধন বাবদ ব্যাংকগুলোকে দিয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো এ সরকার কি চায়? যারা চুরি ডাকাতির করার সুযোগ করে দিয়েছিল তাদের তো কোনো বিচার করতেই পারেনি। উপরন্তু দু-একজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।
এভাবে প্রতিবছর সরকারি ব্যাংকগুলোকে মূলধন জোগানে টাকা দিলে দুর্বৃত্তরা মাথায় চড়ে বসবে। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়ে উঠাতে পারেনি, ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সরকার করের টাকা থেকে সেখানে মূলধন জোগান দিচ্ছে। এ অবস্থায় বিষয়টা কি এভাবে বললে ভুল হবে- চোরদের শেখানো হচ্ছে, তোমরা আরো চুরি করো। চিন্তা নেই প্রতিবছর করের টাকা আসছে। সরকার তোমাদের পেছনে আছে।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী, বিনয়ের সাথে জানতে ইচ্ছে করে, আপনি যে বললেন, ‘বিশ্বের সব দেশেই ব্যাংক জালিয়াতি হয়। আমাদের দেশেও হয়েছে। কমানোর চেষ্টা করছি।’ এ কথা আপনার মুখ থেকে শোনার পর কি ওই জালিয়াতচক্র এটাকে উৎসাহ হিসেবে নিবে না?
আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠতম বাজেট কি এর ফলে কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে যাবে না?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)

Exit mobile version