বিদ্যুৎ প্রাপ্তির দিক থেকে এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আঙ্কটাডের এক প্রতিবেদনের বরাতে এই তথ্য জানায়, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
অনুষ্ঠানে আঙ্কটাডের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এলডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে বিশ্বব্যাংক এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে নিয়ে যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল সেই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বিদ্যুৎখাতে নেপাল ও ভুটানের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে তারা প্রায় লক্ষ্যমাত্রায় পৌছেছে। আর লাওসের লক্ষ্যমাত্রায় পৌছাতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশেরও কম বিদ্যুৎ সংযোগ দিলেই চলবে। তবে সেক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে। কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে এলডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে বাংলাদেশকে প্রতিবছর কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে ২০১৪ সালের বিদ্যুৎ প্রাপ্তির তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে জানিয়ে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রতিবেদনে তিন বছর আগের ডাটা ব্যবহার করা হলেও বর্তমান পরিস্থিতির সাথে খুব বেশি অসামঞ্জস্য হবে না। যদিও গত তিন বছরে বিদ্যুৎখাতে অনেক উন্নতি হয়েছে।
জ্বালানী নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশসহ স্বল্পন্নোত দেশগুলোতে গৃহস্থালীর কাজে ৬৬ শতাংশ গ্যাস, শিল্পখাতে ১৫ শতাংশ, বাণিজ্যিকখাতে ২ শতাংশ, কৃষিতে ৩ শতাংশ ও পরিবহনে ১৩ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হয়। কিন্তু বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হতে হলে জ্বালানীর ব্যবহার শিল্পখাতে বাড়াতে হবে।
জ্বালানীর বিষয়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত আয়ের দেশে পৌঁছাতে অবশ্যই জ্বালানী খাতে উন্নয়ন জরুরি।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জ্বালানী খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক তহবিলগুলো থেকে অর্থ আনার জন্য উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প নেই। তিনি আরও, গ্রামাঞ্চলে এখনও প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের বাইরে রয়ে গেছে। যেখানে আফ্রিকার দেশগুলোতে এই হার ৫০ শতাংশ।
তবে বিদ্যুতের উৎপাদন অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক বলেন, উৎপাদন বাড়লেও এখন পর্যন্ত ব্যবসায়িরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। বিদ্যুৎকে উৎপাদনশীলতার কাজে লাগোনোর জন্য পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার মুয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ।