Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

অন্যায্য কারাবাসের দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী

আদালত সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার সর্বশেষ ভরসাস্থল হলেও মাঝে মাঝে সেখানকার কিছু দুঃখজনক খবর গণমাধ্যমে আমরা দেখতে পাই। তেমনই একটি খবর হলো- উচ্চ আদালত থেকে খালাস পাওয়ার ৮ বছর পরও ফেনীর দাগনভূঁইয়ার খুরশিদ আলমের কারাগার থেকে মুক্তি না পাওয়া।

চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘উচ্চ আদালত থেকে খালাস পেলেও নিম্ন আদালত থেকে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র উধাও হয়ে যাওয়ায় তার মুক্তি আটকে আছে। এর ফলে গত ৮ বছরে কারাগার থেকে মুক্তি পাননি খুরশিদ আলম।

খালাসের রায়ের অনুলিপি ফেনীর আদালতে পাঠানো হয় ২০১১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় মুক্তি পাননি খুরশিদ আলম। গত ১২ সেপ্টেম্বর খুরশিদ আলমের খালাসের আবেদনসহ রায়ের সার্টিফাইড কপি ফেনীর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। ২ অক্টোবর এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

আমরা আশা করি, খালাস পাওয়ার পরও গত ৮ বছর কারাগারে থাকা খুরশিদ আগামী শুনানিতে আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন। এর পাশাপাশি গত ৮ বছরের ক্ষতিপূরণ দাবি করাও অযৌক্তিক নয়।

এর আগেও আমরা প্রায় একই ধরনের কয়েকটি ঘটনা দেখেছি। এমনই একটি মামলা ভোলার চরফ্যাশনের আব্দুল জলিলের। মামলার ১৫ বছর পর গণমাধ্যমের খবরে জানা গেল, ‘ভুল আইনে হয়েছিল ওই মামলার বিচার।’ এমনকি হাইকোর্ট তখন বলেছেন, ‘নিম্ন আদালতের বিচারক ওই মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করেছেন। এর দায় থেকে তিনি অব্যাহতি পেতে পারেন না।’

শেষ পর্যন্ত অবিচারের শিকার হওয়া আব্দুল জলিল গত বছর মুক্তি পেয়েছেন এবং ১৪ বছরের বিনিময়ে তাকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার রায়ও দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। এছাড়াও গত বছরের জানুয়ারিতে বিনা বিচারে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দি থাকা পাঁচ জনকে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

এসব উদাহরণ ছাড়াও গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বিনা বিচারে বছরের পর বছর কারাগারে থাকা আসামির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। বিনা বিচারে কারাগারে থাকা এসব মানুষ এবং তাদের পরিবারের কী দশা হচ্ছে তা সহজেই বুঝা যায়।

আমরা মনে করি, কেউ অন্যায় করে থাকলে তার শাস্তি যেমন পাওনা, ঠিক তেমনই বিনা বিচারে, ভুল আইনে বিচার কিংবা আদালত সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে কারও বন্দী জীবন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন অন্যায় হতে থাকলে বিচার ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকবে না, যা কখনোই আমাদের কাম্য নয়। আদালত এখনও ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে যে অবস্থান ধরে রেখেছে তা অব্যাহত থাকবে বলেই আমরা আশা করি।

Exit mobile version