তেরো বছর আগে মিয়ামি ওপেনেই জন্ম নিয়েছিল টেনিস ইতিহাসের এক রোমাঞ্চকর দ্বৈরথের। জন্মদাতা টুর্নামেন্টের কোর্টে আবারো মুখোমুখি সেই দুই টেনিস কিংবদন্তি। সেটিও ফাইনালে। রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদাল লড়লেন। যাতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী স্প্যানিশ নাদালকে ৬-৩, ৬-৪ সরাসরি সেটে বিধ্বস্ত করে বছরের তৃতীয় মেজর টুর্নামেন্ট জিতে নিলেন সুইস ফেদেরার।
চলতি বছরের এক-তৃতীয়াংশ পার হয়নি, এরমধ্যেই টেনিসের সব রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে তৃতীয়বারের মত মুখোমুখি হলেন রাফা-ফেডেক্স। তবে কোর্টের দ্বৈরথকে ছাপিয়ে আলোচনায় তাদের নতুন প্রত্যাবর্তনের গল্প। বয়স আর চোটের কারণে ফর্ম হারানো, পাদপ্রদীপের বাইরেই চলে যাওয়া, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। ২০১২ সালের পর কোন গ্র্যান্ড স্লাম জিতছিলেন না ফেদেরার, নাদালের সর্বশেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ২০১৪ ফ্রেঞ্চ ওপেনে। পরে মারে-জোকোভিচের দাপটে দুজনের পক্ষে বাজি ধরার মত টেনিস ভক্তই পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেখান থেকেই ফিনিক্স পাখির মত জেগে ওঠা।
সত্যিকারের যোদ্ধারা যে রণে ভঙ্গ দেন না তার আরেক উদাহরণ ফেডেক্স-রাফা। দীর্ঘ পাঁচ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে ১৮তম গ্র্যান্ড স্লামের দেখা পেয়েছেন ফেদেরার। প্রতিপক্ষ ছিলেন নাদাল। ইন্ডিয়ান ওয়েলসও জিতেছেন ফেড-এক্স। সেখানেও শেষ ষোলোর প্রতিপক্ষ নাদাল। এবার মিয়ামিতে নাদালের সুযোগ ছিল প্রতিশোধের, কিন্তু ফেদেরার ব্যবধান বাড়িয়ে নিলেন। যদিও এপর্যন্ত ৩৭বারের দেখায় ২৩ বার জিতে পাল্লাটা নিজের দিকে হেলে রেখেছেন ১৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক নাদালই।
অথচ ছয় মাস আগেও কিন্তু ফেদেরারের পক্ষে বাজি ধরার মত কেউ ছিল না! ৩৫ বছরে এসে যে সকলে বুড়িয়ে যাওয়া কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল তাকে। কিন্তু ফিরে এসেছে হারিয়ে যাওয়া সেই তারুণ্য। নাদাল তাই রোববার রাতে ছাড় পেলেন না একবিন্দুও। প্রথম সেটে এক প্রকার উড়েই গেলেন। দ্বিতীয় সেটে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন রাফা। এবারও একই হাল। বারবার ফেদেরারের বুলেট গতির সার্ভ, ফোরহ্যান্ড আর অতীতকে মনে করিয়ে দেয়া ব্যাকহ্যান্ডের কাছে পরাজিত হয়েছেন।
পরে সেই নাদালের কাছেই পেলেন সেরা শুভেচ্ছা, ‘অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তন। স্বাগতম ফেদেরার। আমি কিন্তু চেষ্টা করেই যাবো, করেই যাবো।’
ফেদেরারও হাসি মুখেই শুভকামনার উত্তর জানিয়েছেন বন্ধুকে, ‘তোমাকেও শুভেচ্ছা, অসাধারণ তোমার প্রত্যাবর্তনও।’
শিরোপা জিতে সবকিছু যেন ঘোরের মতো লাগছে ফেদেরারের। সেটাও জানিয়ে দিলেন, ‘স্বপ্নের মতো লাগছে। কী অসাধারণ একটা শুরু বছরের। এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।’