সিলেট থেকে: চলার পথ ছিল বন্ধুর। ধারাবাহিক চোটের ধকল লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে দেয়নি কখনো। তারপরও এগিয়ে চলেছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। একটি একটি করে ম্যাচ খেলে ধাবিত ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ চলে এসেছেন বিশেষ উপলক্ষের সামনে। শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ওয়ানডে অভিষেকের দিনটি অধিনায়ক মাশরাফীর জন্যও গৌরবের, রেকর্ডের।
উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টস করতে নামলেই বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডেতে (৭০) নেতৃত্ব দেয়ার রেকর্ড গড়বেন মাশরাফী। ছাড়িয়ে যাবেন এক সময়কার সতীর্থ ও বর্তমানে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনকে (৬৯)। মাশরাফীর কাছে গর্বের উপলক্ষ এটি। খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সিটা গায়ে জড়ানোও সীমাহীন গর্বের তার কাছে।
‘বাংলাদেশ দলের হয়ে দীর্ঘসময় অধিনায়কত্ব করতে পেরেছি। এটি আমার এবং আমার পরিবারের জন্য খুব গর্বের। কাল যদি মাঠে নামতে পারি, ওয়ানডে সংস্করণে সবথেকে বেশি ম্যাচ অধিনায়কত্ব করার সুযোগ হবে। অবশ্যই এটা দারুণ অনুভূতি। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ দলের ১১জন বা ১৫ জনের একজন হয়ে থাকা। বাংলাদেশ দলের একজন সদস্য হয়ে থাকাও কিন্তু বিরাট গর্বের ব্যাপার।’
২০০১ সালে অভিষেকের পর মাশরাফী চোটের সঙ্গে যুদ্ধ করে এগিয়ে নিয়েছেন ক্যারিয়ার। টেস্ট অধিনায়কত্ব পান ২০০৯ সালে, উইন্ডিজ সফরে। কিন্তু নেতৃত্বের প্রথম টেস্টেই চোট পেয়ে ছিটকে যান। পরে আর টেস্টে ফেরাই হয়নি।
ওয়ানডে দলে ফেরেন ২০১০ সালের ইংল্যান্ড সফরে। ওই বছরই আবারও চোটে ছিটকে যান। সুযোগ হয়নি ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপে খেলার। শঙ্কা, সংশয় নিয়ে সেসময় ক্যারিয়ার আগায় কচ্ছ্বপগতিতে।
আলোর পথ খুঁজে পান ২০১৪ সালের শেষদিকে। তখন মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে টানা ১৩ ওয়ানডেতে হার দেখে বাংলাদেশ। মাশরাফী কাঁধে আবারও চাপে নেতৃত্বভার। হারের অন্ধকার সরিয়ে জয়ের প্রদীপ জ্বালান মাশরাফী। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই জিম্বাবুয়েকে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইশওয়াশ করে বাংলাদেশ। তৃতীয় দফায় নেতৃত্ব পেয়ে পাল্টে দেন বাংলাদেশ দলকেই। গেল চার বছরে ৬২ ম্যাচে ৩৬বার জয়ীর বেশে মাঠ ছেড়েছে টাইগাররা।
মাইলফলকের ম্যাচের আগে মাশরাফী ফিরে গেলেন অতীতে। সিলেট স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বসে শোনালেন নিজের ভাঙা-গড়ার গল্প।
‘২০১৪ সালে আবার যখন অধিনায়কত্ব পাই, তখন কোনো আশা নিয়ে শুরু করিনি। তার আগেও দুবার অধিনায়কত্ব পেয়েছি। শুরুতে এক-দুই-তিন বা চার-পাঁচ ম্যাচ পর ইনজুরিতে পড়ে গিয়েছি। ইনজুরিতে পড়ে টিম থেকে বাদ হয়েছি। দীর্ঘদিন বাইরে ছিলাম। পরেরবার আবার একই পরিস্থিতি। অধিনায়কত্ব আমার ইস্যুতে ছিল না। আমার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলা। পরেরবার(২০১৪) যখন অধিনায়কত্ব পেয়েছিলাম, তারপর থেকে অনেককিছু আমি ভাবিনি।’
‘তবে প্রথমবার(২০০৯ সাল) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যখন অধিনায়কত্ব পাই, তখন অনেক আশা ছিল। টেস্ট ক্রিকেটে তখন পুরোপুরি ছন্দে ছিলাম। ২০০৮ সালে টেস্টে খুব ভালো ফর্মেও ছিলাম। তখন অনেক আশা ছিল। ২০১৪ সালে যখন আবার দায়িত্ব পাই, তখন নিজেকে নিয়ে ভবিষ্যত চিন্তা করা বা খেলোয়াড় হিসেবে নিজে কোনো কিছু সেট করতাম না। চলতে থাকুক যতদিন চলতে থাকে। এভাবেই চিন্তা করেছি। এভাবে করতে করতে প্রায় চার বছর হতে যাচ্ছে।’