বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ কিছু আলোকচিত্র দেখতে জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মানুষের ঢল নামে। শিশু, তরুণ আর প্রবীণেরা ঘুরে ঘুরে দেখেন বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন এবং পারিবারিক অ্যালবামের বাছাই করা কিছু ছবি। অস্থায়ী মঞ্চে চলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা পাঠ, পাশেই শিল্পীর নিপূণ তুলিতে ক্যানভাসে মূর্ত জাতির পিতা। শোকাবহ দিনে পিতাকে নিয়ে লেখা অনুভূতিগুলো ধারণ করে সাদা ব্যানার।
সেখানেই মায়ের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুকে ‘দেখতে’ আসা ছোট্ট শিশুটি কচি হাতে বানান করে করে লিখছিলো ‘জয় বাংলা’। রাজীব ফাইয়াজ নামের আরেক শিশু জাতির পিতার অদেখা মুহূর্তগুলো দেখে লিখেছে: ‘অনেক ভালো লেগেছে’।
পাশেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনি লিখেছেন, ‘এই মহান বাঙালীকে যদি আবারও ফিরে পেতাম, তবে বাঙালী হিসেবে নিজেকে ধন্য মনে করতাম’।
‘আজীবন হৃদয়ে রাখবো তাঁর নাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘তুমি এসেছিলে বলে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, তোমার-আমার, প্রত্যেক মানুষের জীবনে দিয়েছো অনাবিল আনন্দ, তোমাকে ধন্যবাদ বঙ্গবন্ধু’। এরকম হাজারো শব্দে শ্রদ্ধাবনত জাতি স্মরণ করে জাতির জনককে।
জাতির অভিভাবক হারানোর শোকে উড়ছে কালো পতাকা, অর্ধনমিত লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। পাশেই মাথা উঁচু করে থাকা গণতন্ত্রের প্রতীক জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দুপুরের রোদ উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর আলোকচিত্র দেখেন দর্শনার্থীরা। অনেকেই সেইসব দুর্লভ মুহূর্তের পাশে দাঁড়িয়ে ফ্রেমবন্দি করেছেন নিজেকে, একাত্ম হয়েছেন মুজিব স্নেহে।
কালো পোশাকে আসা কয়েকজন ছবি তুলছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সঙ্গে। তাদেরই একজন আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মী আতিক। তিনি জানালেন, এমনিতেই আমাদের ইউনিফর্ম কালো। সহকর্মীরা এসেছি এই পোশাকেই শোকে একাকার হতে।
তিনি বলেন, আজ জাতির শোকের দিন। জাতির পিতা থাকলে হয়তো দেশটা আরও অনেকদূর এগিয়ে যেতো। সবসময় তাঁর শূন্যতা অনুভব করি’।
মিরপুর থেকে আসা হ্যাপি বলেন, ‘সপরিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের জন্যই শোকের। জাতীয় জীবনে আজ কলঙ্কময় এক অধ্যায় সূচনার দিন। এখানে এসে জাতির পিতার ছবিগুলো দেখে তাঁর স্মৃতির সাথে, তাঁর সাথে একাত্ম হলাম।’
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্লভ ছবিগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘চিত্রগাঁথায় শোকগাথা’ আলোকচিত্র প্রদর্শনীটির আয়োজক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
বৃহস্পতবিার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রদর্শনীতে মোট ১০৬টি র্দুলভ আলোকচিত্র, পত্রিকার কাটিং দেখার পাশাপাশি দেশ বরেণ্য শিল্পীদের হাতে আঁকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও দেখার সুযোগ পায় মানুষ। নতুন প্রজন্মকে উৎসর্গ করা প্রদর্শনীটির মাধ্যমে এবারই প্রথম জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে এ ধরণের একটি আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা হয়।
তিনদিনের প্রদর্শনী রাত ১০টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিলো। মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অবাধ ছিলো রিকশার চলাচল।
(আলোকচিত্র: নাসিমুল শুভ)