
‘আজকে ফেসবুকে ঢুকতেই এক বড় ভাই মেসেজ দিল। এখন থেকে বুঝি ফেসবুক থেকে ৫০০ টাকা ইনকাম করা যায়। আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি । কিন্তু আমি যখন নিজে ৫০০ টাকা পেলাম ঠিক তখনই বিশ্বাস হয়েছে।’- এরকম বার্তা দিয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণা করছে একটি চক্র। করোনাভাইরাসের কারণে অবরুদ্ধ থাকা তরুণদের লক্ষ্য করে এই প্রতারণার জাল বিছানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সামাজিক মাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
প্রতারণার ওই ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে তাদের ফেসবুক একাউন্ট হারানোসহ মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট থেকে অর্থ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, অনেকটা কৌতুহলের বশে ওই লিংকে করার পরে হ্যাকাররা আমার ফেসবুক একাউন্ট তাদের দখলে নেয়। আমার একাউন্ট থেকে পরিচিতদের ইনবক্সে টাকা চাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে হাজার খানেক টাকার বিনিময়ে কিছুদিন পরে হ্যাকারের কাছ থেকে সেই একাউন্ট ফেরত পেয়েছি।
প্রতারক চক্র বিভিন্ন গ্রুপ পোস্ট নয়তো বিভিন্ন জনপ্রিয় নিউজ সাইটের ফেসবুক পেজ পোস্টে মন্তব্য আকারে ওই লিংক পোস্ট করে থাকে। ওইসব পেজের অন্য পাঠকদের অনেকে ওই লিংকে ক্লিক করে বিপদ ডেকে আনছেন। করোনার এই সময়ে সামাজিক মাধ্যমে অলস সময় কাটাতে অনেকে এসে এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

এবিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও এসইও নিয়ে কাজ করা জহির সুজন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এ ধরণের লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। এটি একটি স্ক্যাম অর্থাৎ প্রতারণা বা ঠকানোর জন্য ব্যবহৃত কৌশল বা ফাঁদ। একবার ভেবে দেখেছেন, যে ব্যক্তি আপনাকে ১০ মিনিটে ৫০০ টাকা ইনকামের কথা বলছে, সে নিজেই কেন সারাদিন ধরে ইনকাম না করে আপনাকে উৎসাহ দিচ্ছে।
ওইসব লিংকে ক্লিক করলে কী ধরণের ক্ষতি হতে পারে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ১০ মিনিটে ৫০০ টাকা ইনকামের ফাঁদে পা দিয়ে কেউ লিংকে ক্লিক করার পরে তাকে ফেসবুকে লগইন করতে বলা হয়। ফেসবুকে লগইন অবস্থায় থাকার পরেও আবার লগইন করতে গিয়েই আসল বিপদটি ঘটে যায়। ফেসবুকের লগইন পেজের মত করে বানানো পেজটি দিয়ে ইউজারের ফেসবুকের ইমেইল ও পাসওয়ার্ড নিয়ে নেয়া হচ্ছে। এতে তার লগইন ইনফরমেশন চলে যাচ্ছে স্ক্যামারদের হাতে। এরপরে হ্যাক হওয়া একাউন্ট থেকে পরিচিতদের কাছে থেকে টাকা চাওয়াসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য দিয়ে নয়তো পর্ন ছবি পোস্ট করার হুমকি দিয়ে টাকা চাওয়া হচ্ছে। মানসম্মানের ভয়ে অনেকে টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে।
১০ মিনিটে ৫০০ টাকা ইনকামের প্রতারণামূলক আরেকটি লিংকও সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে। সেখানখার ওই লিংকে গ্রাহককে তার কথিত বোনাস হিসেবে পাওয়া ৫০০ টাকা দিতে তার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট (বিকাশ/রকেট/নগদ) এর নম্বর ও পিন নম্বর চাওয়া হয়। অনেকে লোভে পড়ে তাদের একাউন্টের তথ্য শেয়ার করে হারাচ্ছেন টাকা।
ই-কমার্স ও অনলাইন ট্রানজেকশন নিয়ে কাজ করা তথ্যপ্রযুক্তিবিদ আরিফুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং অথরিটি সবসময় গ্রাহকের একাউন্ট তথ্য দিতে মানা করেন। কিন্তু অনেকে লোভে পড়ে এ কাজ করেন। সিকিউর প্ল্যাটফর্ম ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এর পিন নম্বর কখনই কোথাও দেয়া ঠিক না। সামাজিক মাধ্যমে ওইধরণের প্রতারণামূলক পোস্ট দেখলে ফেসবুকে রিপোর্ট করার সুযোগ আছে, অথবা যেসব ফেসবুক পেজ/গ্রুপে ওইধরণের পোস্ট করা হচ্ছে, তাদের এডমিন নয়তো মডারেটরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে। প্রতারণার শিকার হয়েই গেলে সাথে সাথে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট অভিযোগ করা জরুরি, যাতে করে প্রতারক অন্য কাউকে আর প্রতারণা করতে না পারে।
এধরণের সাইবার অপরাধ ও প্রতারণা বিচারে দেশে কঠিন আইন রয়েছে। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হ্যাকিং, ভাইরাস ছড়ালে কিংবা কোনো সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ করলে সাইবার অপরাধ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
এবিষয়ে সাইবার ক্রাইম এওয়ারনেস ফাউন্ডেশন ওয়েবসাইটে বলা আছে, প্রতারণার ঘটনার বিবরণ এবং বিকাশ বা রকেটের যে নাম্বার পাঠিয়ে টাকা দাবি করছে তা উল্লেখ করে নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সম্প্রতি শহরের প্রতিটি থানার একজন ইন্সপেক্টর এবং দুজন এসআইকে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিশেষ ট্রেনিং দিয়েছে। ফলে ফেসবুক আইডি হ্যাকের ঘটনায় থানায় গিয়ে প্রতিকার চাইতে গেলে আগের মতো বিব্রত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হওয়ার সম্ভবনা এখন কম। কোনো কারণে থানায় প্রতিকার না পাওয়া গেলে জিডির কপি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়াও দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করলে প্রতিকার মিলবে।