হালাল পণ্য উৎপাদনের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বারে হালাল পণ্য বিষয়ক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ সাইদ, ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আবুল কাসেম খান, সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসাইন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। শুধু মুসলিম নয়, এখন অমুসলিমদের মধ্যে এ পণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। ফলে বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার এখন ৩ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তাই রপ্তানি নির্ভর এ বাজার ধরতে দেশে হালাল পণ্য উৎপাদনে জন্য আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল করা দরকার।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আমিনুল ইসলাম বলেন, বিশ্বে এখন মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১৮০ কোটি। তাই হালাল পণ্যের একটি বিশাল বাজার রয়েছে। তবে শুধু মুসলমানরাই হালাল পণ্যের ভোক্তা নয়। এখন ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অমুসলিম দেশেও হালাল পণ্যের ভোক্তা ব্যাপক হারে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক এই বিশাল বাজার ধরতে হালাল পণ্য উৎপাদন খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাকের মতো খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য থেকে রপ্তানি আয় করা সম্ভব। বাংলাদেশ এখন তৃতীয় রপ্তানি পণ্য হিসেবে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্যের ওপর নির্ভর করছে। তাই হালাল পণ্য উৎপাদনের জন্য আলাদা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। এ জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও এর সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তিসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেবে সরকার।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠান আরএসিএস কোয়ালিটি সার্টিফিকেট ইস্যুইং সার্ভিস এলএলসির হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ওসামা ইমাম।
এতে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্য ও প্রসাধনীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার ৩ লাখ কোটি (৩ ট্রিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ওষুধ, পানীয়, খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য ও প্রসাধনীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশাল এ চাহিদার বাজারে অনেক নামি দামি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকছেন। বিশ্বের অন্যতম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশও তার নিজের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি বাণিজ্যে জোরদার করতে পারে।
ডিসিসিআইর সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, পৃথিবী জুড়ে হালাল পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং থাইল্যান্ড এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু মুসলিম প্রধান দেশ হয়েও বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে যেতে পারেনি।
এ সময় তিনি এ খাতের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন, সহযোগিতা প্রদান, দক্ষ জনবল তৈরি, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা উন্নয়ন ও হালাল সনদ প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করার আহবান জানান।
সাইদ মোহাম্মদ সাইদ বলেন, অমুসলিম দেশগুলোতে হালাল পণ্যের চাহিদা বাড়ায় এ ধরনের পণ্য উৎপাদনের বিষয়টি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে।
তিনি জানান, ট্রান্সপারেন্সি মার্কেট রিসার্চের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সারা পৃথিবীতে হালাল পণ্যের বাজার মূল্য ছিল প্রায় ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে এটি প্রায় সাড়ে ১০ ট্রিলিয়নে এসে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে।