মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বাস করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে একমাত্র কার্যকর ওষুধ ‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন’। অর্থরাইটিস ও ম্যালেরিয়ায় ব্যবহার হওয়া এই ওষুধটি নিয়ে রীতিমতো অনুরোধ ও হুমকির সব রাস্তা ব্যবহার করে ফেললেন ট্রাম্প।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রথমে ফোনে অনুরোধ আর পরে অনেকটা হুমকির মতো বাক্য উচ্চারণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরেই এই ওষুধ কূটনীতি একটি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে।
যদিও এখন পর্যন্ত কোনও গবেষক বা চিকিৎসক নিশ্চিত নয় যে, করোনা ওই ওষুধেই সারবে। তবুও ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে, করোনা সারতে পারে ওই ওষুধেই। তাই এই কড়া বার্তা।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আমি কথা বলেছি এই নিয়ে। ভারত থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠালে ভাল। যদি উনি তা না পাঠান, তাহলেও ঠিক আছে! কিন্তু প্রত্যাঘাতও হতেই পারে, কেন হবে না?’
I spoke to him (PM Modi), Sunday morning & I said we appreciate it that you are allowing our supply (of Hydroxychloroquine) to come out, if he doesn’t allow it to come out, that would be okay, but of course, there may be retaliation, why wouldn’t there be?: US Pres Donald Trump pic.twitter.com/kntAqATp4J
— ANI (@ANI) April 6, 2020
কী আছে ওই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনে?
অনেক দেশে অনেক চিকিৎসক করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে আশা মানছেন। আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশের করোনা রোগীদের উপরে ওই ওষুধ প্রয়োগে কিছু ফল পাওয়া গেছে বলে দাবি উঠলেও তা এখনও সর্বসম্মত নয়। জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, একমাত্র ডাক্তারের পরামর্শেই ওই ওষুধ নেওয়া যাবে। ভারতও এই ওষুধ ব্যবহারে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে খবর প্রকাশ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে, এক রোগের ওষুধ অন্য রোগের চিকিৎসায় কাজ দিচ্ছে, এমন উদাহরণ অনেক আছে। তেমন আশাবাদের জায়গা থেকেই এই ওষুধ নিয়েই এতো আশা।
ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ, এই ওষুধ অ্যান্টি ম্যালেরিয়া ড্রাগ ক্লোরোকুইন থেকে একটু আলাদা। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ অটো ইমিউন রোগ অর্থাৎ অর্থরাইটিস রোগের ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই ওষুধকে করোনা ভাইরাসের সাময়িক প্রতিষেধক রূপে প্রকাশ করার পরই জানা গেছে এই ওষুধ SARS-COV-2 রোগের প্রতিষেধক রূপেও প্রযোজ্য ছিল। এই ভাইরাস আবার কোভিদ- ২ রোগের জন্য দায়ী।
১৯ শে মার্চ দ্যা লেশেন গ্লোবাল হেলথের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ওষুধ করোনা ভাইরাসের সাময়িক প্রতিষেধক হিসাবেও কাজ করে। আমেরিকার মতো দেশে করোনা রোগীদেরকে ওই ওষুধ দেওয়া হচ্ছে এবং এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে এই ওষুধের চাহিদা বাজারে অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু বর্তমানে ভারতে ওই ওষুধ কিছু কম পরিমাণে উৎপাদিত হওয়ায় ভারত সরকার এই ওষুধের রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেয়।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন একটি জীবনদায়ী ওষুধ হলেও বিনা ডাক্তারি উপদেশে ব্যবহারে হার্ট-ব্লক বা হৃদস্পন্দনে গোলযোগের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও ঘুম-ঘুম ভাব, হাঁচি, বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে, যা সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে তুলতে পারে। তাই আইসিএমআরের গবেষকদের বক্তব্য অনুযায়ী, ডাক্তারের উপদেশ ব্যতীত নিজ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার নিরাপদ নয়।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কি সহজলভ্য?
যেসব দেশে ম্যালেরিয়াসহ অর্থরাইটিস রোগের প্রকোপ আছে, সেসব দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন একটি বহুল প্রচলিত ও সহজলভ্য ওষুধ। চা বাগান ও পাহাড়ী এলাকায় প্রায় সারাবছরই ম্যালেরিয়া টাইপ জ্বরে এটা ব্যবহার হয়। বাংলাদেশসহ ভারতে এটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসহ দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে এটি বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। সম্প্রতি এই ওষুধের সাথে করোনা চিকিৎসার স্বল্পমাত্রার আশার কারণে আকাশের চাঁদ হয়ে উঠেছে ওষুধটি। তবে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ঔষধাগারসহ বিভিন্ন হাসপাতালে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রচুর স্টকে আছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
ভারতেও এই ওষুধটি বেশ সহজলভ্য, সেকারণেই এটি আমদানির চেষ্টা করেছে কিছু মার্কিন কোম্পানি। কিন্তু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে তাতে ব্যর্থ হয়েই ক্ষেপেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা সবচেয়ে কাহিল। সামান্য কোনো আশার আলো দেখলেই তার পেছনে সবাই দৌঁড়াচ্ছেন প্রাণের তাগিদে। মার্কিন প্রেসিডেন্টও হয়তো সে অবস্থায় ওরকম মেজাজ হারানো কাজ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিয়ে ইতিবাচক সঙ্কেত দিতে শুরু করেছেন বলে গণমাধ্যমের খবর।
সারাবিশ্বে মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৯১ মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছে প্রায় ৮২ হাজার ৭৪ জন মানুষ। এই অবস্থা পরিবর্তনে এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল কোনো ওষুধ বা প্রতিষোধক বের হয়নি, তবে অনেক দেশই ট্রায়াল হিসেবে অনেক ভ্যাকসিন সেচ্ছাসেবকদের উপরে প্রয়োগ করতে শুরু করেছেন। হয়তো শীঘ্রই সৃষ্টিকর্তার কৃপায় কোনো সমাধান বের হয়ে আসবেই!
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)