আল জাজিরায় একটি সাক্ষাতকার দেয়ার পর আটক আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় একটি বিষয় যোগ হয়েছে। সেটি হচ্ছে একটি ছবি। সামাজিক মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের একটি ছবি পোস্ট দিচ্ছে শহিদুল আলমের পরিচিতরা। এই ছবির ক্যাপশন ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি। ক্যাপশনে থাকা ভুল তথ্যে নিজেও বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করাদের একজন, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর।
ছবিটি পোস্ট করার পেছনে নিজের উদ্দেশ্য চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে তুলে ধরেছেন এই মানবাধিকার কর্মী।
তিনি শহিদুলের বাবা-মা সম্পর্কে যারা তেমন জানেন না তাদের জানাতেই এই ছবি পোস্ট করেছেন জানিয়ে বলেন, “আমি যাদের পক্ষে দাঁড়াই বা বক্তব্য দেই , তাদের সব কিছুতে যে আমায় একমত হতে হবে বা একই চিন্তার হতে হবে সেটা তো না, আমি দেখি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা। শহিদুল আলমকে যেভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমি অবাক হয়েছি সরকারের বিভিন্ন পদে নানা স্তরে থাকা লোকজন আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমি শহিদুল আলমকে চিনি কিভাবে। তার মানে এরা শহিদুল আলমকে, তার পরিবারকে ঠিকমতো চেনে না। তার পরিবার যে খ্যাতিসম্পন্ন এটা জানাতে আমি এই ছবি পোস্ট দেই। এর মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছি শহিদুল আলমের পরিবারকে সবাই চেনে।’’
কিন্তু ছবির নিচে থাকা ভুল ক্যাপশনে নিজেও বিভ্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে খুশি কবীর বলেন: একটা ভুল হয়েছে, যে আমাকে ছবিটা দিয়েছিলো, সেখানে ক্যাপশনে লেখা ছিলো আনোয়ারা মনসুর স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন, আসলে তা তিনি পাননি। তিনি স্বামী ড. কাজী আবুল মনসুরের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। পরে আমি এটা আমার পোস্টে সংশোধন করেছি।ছবির নিচে যে ক্যাপশন সেটা আমি দেইনি, আমি আরেকজনের কাছ থেকে ছবিটা নিয়েছি মাত্র। আমার উচিৎ ছিলো এটা যাচাই করা।
তিনি আরও বলেন: কিন্তু এটা তো ইস্যু না। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আনোয়ারা মনসুরের ছাত্রী। ছবিতে তার হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন আনোয়ারা মনসুর। এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন আসতে পারে না। এখন এই ছবি দিয়ে আমি ব্যক্তি শহিদুলের কোন অবস্থান বা কিছু নিয়ে আলোচনায় যাচ্ছি না। আমাকে লোকজন প্রশ্ন করেছে যে আমি শহিদুলকে কিভাবে চিনি, তার উত্তরে আমি এই ছবি দিয়েছি, কারণ তার পরিবারকে আমি চিনি।
নিছক পরিচয় জানানোর তিনি ছবিটি পোস্ট করলেও একই ছবি সামাজিক মাধ্যমে নানা জনের কাছে নানা বার্তা বহন করছে। নানা ভাবে ছড়ানো হচ্ছে।
ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে নানামুখী তর্ক-বিতর্ক চলছে। তবে এই ছবির মাধ্যমে আটক শহিদুলের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ মোটেও হাল্কা করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দেব নন্দী।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সে কত বড় ফটোগ্রাফার বা তার বাবা কে ছিলেন এখন সেই আলোচনা সামনে আনার আদৌ কোন মানে নেই। এমনকি তার পারিবারিক পরিচয় নিয়ে ওঠা কথাও আমার কাছে মুখ্য না। আমরা যেটা দেখছি সেটা হলো তার রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান। বিশ্ববাসীর কাছে একটি বিতর্কিত টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে সে বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে। একটি সামাজিক আন্দোলনকে সে সরকার পতনের আন্দোলন বলে অপপ্রচার চালিয়েছে। সে বাংলাদেশ বিরোধী বার্তা দিয়েছে, দেশকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। এখানে তার আদর্শিক জায়গা নিয়েও প্রশ্ন থাকে। সে অপরাধ করেছে, সেই অপরাধের বিচার হতে হবে। এখানে এসব ছবি এনে মূল বিষয় থেকে আলোচনা অন্য দিকে নেয়ার সুযোগ নেই। তার অপরাধ হাল্কা করতে এসব ছবি ও নানা বিতর্ক আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন: ‘ছবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তার মা তার বাবার হয়ে স্বাধীনতা পুরস্কার নিচ্ছেন দেখা যাচ্ছে। এতে পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তির সন্তানের করা অপরাধ তো বৈধ হয়ে যাচ্ছে না। একটি ছবি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে সিমপ্যাথি নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে, অপরাধ আড়াল করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনি ও রোববার জিগাতলা এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেসবুক লাইভে আসেন শহিদুল আলম৷ ওই আন্দোলনের বিষয়ে কাতার ভিত্তিক টেলিশিন চ্যানেল আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিরাপদ সড়কের আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলন হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করেন৷ এরপর রোববার রাতে শহীদুলকে তার ধানমণ্ডির বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ৷